গ্রীষ্মের তাপে স্বস্তির সন্ধান-বেল ফলের জাদু, প্রকৃতির দেওয়া একটি উপকারী উপহার
বেল:
প্রতিদিন এক গ্লাস বেল শরবত শরীর ও মন ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। বেল ফল খেলে পেট থাকবে হালকা, শরীর থাকবে চাঙ্গা, গ্রীষ্মে বেলের মতো প্রাকৃতিক ঠাণ্ডা আর কোনো কিছুতে হয় না। বেল শুধু একটি ফল নয়, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার এক অতুল উপাদান। গ্রীষ্মের প্রদাহে শরীরে জ্বালাপোড়া হোক বা হজমের সমস্যা, সমাধানে বেল ফলের কোন জুরি নেই।
বেলের বৈজ্ঞানিক নাম Aegle marmelos
বেল খাওয়ার উপায়:
১) বেলের ফল ও পাতা হিন্দু ধর্মে পূজা অর্চনার জন্য ব্যবহৃত হয়।
২) পাকা বেল দিয়ে শরবত বানানো হয়।
৩) বেলের মোরব্বা মিষ্টি ও আচার বানানো হয়।
৪) শুকনো বেল গুড়ো হালকা গরম জলে খেলে পেটের সমস্যা কমে।
বেলের পুষ্টিগুণ:
১) ভিটামিন:
ভিটামিন এ ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের একটি ভালো উৎস।
২) খনিজ:
এতে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম ও আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান রয়েছে।
৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:
বেলের মধ্যে ফেনোলিক যৌগ ও অন্যান্য আণ্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
৪) ফাইবার:
বেল ফাইবার সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজমে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।
৫) অন্যান্য পুষ্টি উপাদান:
বেলের অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন-কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন,ফ্যাট ইত্যাদি ও আমাদের শরীরে সরবরাহ করে।
৬) বেল ফল ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ভিটামিন সি,ভিটামিন এ,ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,আঁশ ফাইবার,ও প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হতো।
ঔষধি গুণ:
হজম শক্তি বৃদ্ধি, ডায়ারিয়া ও আমাশয় নিরাময়,কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, চোখে ছানি নিরাময়,শ্বাসকষ্টের উপশম, পাইলস ও ফিস্টুলা নিরাময়, রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শরীরের ক্লান্তি দূর করা,স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে সাহায্য করা।
বেলের উপকারিতা:
১) বেল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বেলের মধ্যে ভিটামিন সি ও অন্যান্য এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২) বেলের আণ্টিটিভাইরাল, আণ্টিফাঙ্গাল ও আণ্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আমাদের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩) বেলে আছে ফেনুলি কম্পাউন্ড যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এটি আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকেল দূর করে এবং বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না।
৪) পেট ঠান্ডা রাখে বেলের শরবত শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে ও গরমের সময় আমাদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৫) কাঁচা বেল সেদ্ধ করে শরবত বা পাতা দিয়ে শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়।
৬) বেলের ফাইবার খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে।
৭) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
বেলের মধ্যে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।কারণ এটি আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৮) হৃদরোগে ঝুঁকি কমায়:
বেল ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৯) ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে:
বেলের ভিটামিন সি আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
১০) হজম শক্তি বৃদ্ধি:
বেল আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, বেলের মধ্যে থাকা ফাইবার হজম সহায়ক এনজাইম নিঃসরণে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপকারিতা:
১) বেলের মূল,ছাল ,পাতা ,ফল বিভিন্ন সংক্রমণ ও প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টিফাঙ্গাল ও আণ্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
২) বেলের পাতা রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম হয়। পাতার রস, মধু ও গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে জন্ডিস রোগ নিরাময় হতে পারে। পেট খারাপ আমাশয়, শিশুদের স্মরণ শক্তি বাড়ানোর জন্য বেল উপকারী।
৩) লিভার ভালো রাখতে কাজ করে বেলে থাকা থিয়ামিন ও রিবোফ্লাভিন।
৪) ম্যালেরিয়া হলে কাঁচা বেলের শরবত বা ভিজিয়ে রাখা জল খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫) আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বেল খেলে। কারণ এতে আছে আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।
৬) পাকা বেলে রয়েছে মেথানল নামক উপাদান যা আমাদের শরীরের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বেলের শরবত খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া পাকা বেল আমাদের রক্ত শুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
৭) যাদের পাইলস ও ফিস্টুলা ইত্যাদি মলদ্বারের রোগ আছে তাদের জন্য বেল ভীষণ উপকারী।
৮) পাকা বেলে রয়েছে আলসার উপশমকারী উপাদান। যাদের এই সমস্যা আছে তারা বেলের শরবত খেলে উপকৃত হবেন।
সতর্কতা:
১) বেল শরীরের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।বেল খাওয়ার পরিমাণ অতিরিক্ত হলে শরীরের ওজন বেড়ে যেতে পারে ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
২) গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত কারণ কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়া বা সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত হতে পারে।