
পুষ্টিকর খাবার এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট করে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কীভাবে
বর্তমানে মানুষ যেভাবে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে, তাতে সুস্থ থাকা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও, প্রত্যেকেরই নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়া খুবই জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, অধিকাংশ মানুষের খাদ্যাভ্যাস অনিয়মিত এবং তারা নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে না, যার ফলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে আমাদের চারপাশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা পরিবর্তন আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আর যারা বিভিন্নভাবে কঠোর পরিশ্রম করেন, তাদের আরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা উচিত। না হলে সুস্থ থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়া, বাইরের ফাস্ট ফুড খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই উপকারী নয়। তাই যতটা সম্ভব এই ধরনের ক্ষতিকর খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবারকেই প্রাধান্য দিতে হবে। না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কোন কোন খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত
শাক সবজি ও ফল
প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ ধরনের শাকসবজি ও ফল খাওয়া পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এগুলো ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। অন্তত পাঁচ অংশ ফল ও সবজি, অর্থাৎ প্রায় ৪০০ গ্রাম, খাওয়া উপকারী। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এবং কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডাল ও শস্য
খাদ্যতালিকায় ব্রাউন রাইস, ওটস, ডাল, ছোলা, মুগ ডাল ইত্যাদি রাখুন, কারণ এগুলো প্রোটিন ও ফাইবারের চমৎকার উৎস।
দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই, পনির ইত্যাদি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনে সমৃদ্ধ, তাই এগুলো নিয়মিত খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকর প্রোটিন
ডাল, বাদাম, মাছ, ডিম এবং চর্বিহীন মাংস খান। উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
সাম্প্রতিক গবেষণা ও প্রবণতা দেখায়, খাদ্যের গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট ও চর্বির গুণগত মান সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পুরো শস্য, ফল, সবজি এবং স্বাস্থ্যকর তেল খাওয়া দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। উদ্ভিজ্জ-ভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ প্রোটিন সীমিত রেখে খেলে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
চর্বি ও চিনি-সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াজাত খাবারের গ্রহণ বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে, যা খারাপ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলছে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের বিষয়ে, ২০২৫ সালের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, চর্বি ও চিনি-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ক্ষতি করতে পারে।
ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে যেসব খাবার এড়ানো উচিত
ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ২০২৫ সালে কিছু খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, রেডি মিক্স খাবার, চিপস, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্রেড এবং মিষ্টি ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল সীমিত করা উচিত। প্রসেসড মাংস যেমন হ্যাম, সসেজ, হট ডগ, বেকন এড়ানো উচিত।
অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার, যেমন চিনি মিশ্রিত পানীয়, পেস্ট্রি, আইসক্রিম এবং দোকানের ফলের রসের পরিমাণ কমাতে হবে।
অস্বাস্থ্যকর চর্বি যুক্ত খাবার, যেমন ডিপ ফ্রাইড খাবার এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত বেকারি পণ্যও এড়ানো উচিত।
তেমনি, অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার যেমন ক্যানড স্যুপ, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস ও নোনতা স্ন্যাকস খাওয়া সীমিত করা ভালো।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণের জন্য পরামর্শ
১. বিভিন্ন রঙের ও মৌসুমি ফল এবং সবজি খান।
২. সাদা চাল বা ময়দার বদলে ব্রাউন রাইস, লাল গমের রুটি ও ওটস বেছে নিন।
৩.প্রোটিনের জন্য মাছ, ডিম, বাদাম, ডাল, দুধ, দুগ্ধজাত খাবার ও চর্বিহীন মাংস অন্তর্ভুক্ত করুন।
৪. রান্নার জন্য সরিষার তেল, অলিভ অয়েল বা বাদামের তেল ব্যবহার করুন।
৫. অতিরিক্ত চিনি ও প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৬. খাবার নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করুন।