ভুজঙ্গাসন
ব্যায়াম ঠিক যেন একটি নেশার মতো। একবার যখন আপনারা এই অভ্যাসটিতে প্রবেশ করবেন, তখনই আপনারা অনুভব করতে পারবেন যে এটি আপনাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়।
ভুজঙ্গাসন একটি জনপ্রিয় যোগাসন। এটি মেরুদণ্ড বুক ও পেটের জন্য একটি চমৎকার আসন। শরীরের উপরের অংশের শক্তি বৃদ্ধি করে ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ভূজঙ্গাসন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে যেখানে ভুজঙ্গ মানে সাপ বা কোবরা ও আসন মানে ভঙ্গি সুতরাং ভুজঙ্গাসন মানে সাপের ভঙ্গি বা কোবরা পোজ।
পদ্ধতি:
১) একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ম্যাট ব্যবহার করবেন।
২) প্রথমে উপুর হয়ে শুয়ে পড়বেন, হাতের তালু কাঁধের দুপাশে রাখবেন।
৩) শ্বাস নিতে নিতে হাতের উপর ভর দিয়ে বুক পেট ও মাথা উপরের দিকে তুলবেন।
৪) কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অংশ মেঝেতে লেগে থাকবে।
৫) শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড এই ভঙ্গিতে থাকবেন।
৬) শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসবেন।
৭) ভুজঙ্গাসন আপনাদের শরীরে সঞ্চিত চাপ দূর করার জন্য একটি দুর্দান্ত যোগব্যায়াম। এটি শরীরের পেশীগুলিকে শিথিল করে ও ক্লান্তি থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেয়।
৮) একটি সুস্থ শরীর আপনাদের সারাদিন সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে।
৯) সুস্থ শরীর বজায় রাখার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাদাস ব্যায়াম ও জীবনধারা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০) যোগব্যায়ামের অভ্যাস আপনার শরীর গঠনে সাহায্য করতে পারে।
১১) যোগ ব্যায়াম আপনাদের সামগ্রিক শরীরের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।
১২) যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে এক পয়সা খরচ না করে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা কমানো যেতে পারে।
ভুজঙ্গাসনের শারীরিক উপকারিতা:
১) পেটের মেদ কমায়:
পেটের অংশের চর্বি কমানো ব্যায়ামের একটি চ্যালেঞ্জিং অংশ ভুজঙ্গাসন। পেটকে প্রসারিত ও লম্বা করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ভাবে,এটি অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে পেটের চর্বি কমায়।
২) কোমরের ব্যথার জন্য একটি চমৎকার যোগাসন:
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে মেরুদন্ডের সংকোচনের ফলে কোমর ব্যথা হয়। তবে ভুজঙ্গাসনের মতো যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে মেরুদন্ডের একটি বিস্তৃত প্রসারন এটিকে শক্তিশালী করে। প্রতিদিনের কোমর ব্যথা কমাতে এটি একটা দুর্দান্ত হাতিয়ার। ব্যথা উপশমের জন্য সকল ব্যক্তিদের অনুসরণ করা উচিত।
৩) বাহুর শক্তি বৃদ্ধি করে:
হাতের জোরে যোগ ব্যায়াম করা হয় তাই এটি আপনার কাঁধ বাইসেপ ও ট্রাইসেপ শক্ত করে তোলে।
৪) বর্ধিত নমনীয়তা:
সাপের ভঙ্গি শরীরের প্রতিটি অংশকে প্রসারিত করে,যার ফলে নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
৫) সায়াটিক স্নায়ুর ব্যথা উপশম:
ভুজঙ্গাসন মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের জন্য সায়াটিকা ব্যথা উপশম করে। এটি স্ট্রেচিং এর মাধ্যমে আক্রান্ত পায়ের পেশী টান কমায়।
৬) হাঁপানির প্রভাব কমায়;
গভীর শ্বাস নেওয়ার সময় সাপের ভঙ্গি শ্বাসনালী পরিষ্কার করে। এটি আপনার ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির প্রভাব কমায়।
৭) আপনাদের শরীরের একাধিক অংশের উপকার করে:
ভূজঙ্গাসনের প্রধান উপকারী অংশ হল পেট,মেরুদণ্ড, নিতম্ব,ও বুক। শরীরের এই অংশগুলিতে যেকোনো অস্বস্তি থাকলে আরাম পাওয়া যায়।
৮) ভুজঙ্গাসনের মানসিক উপকারিতা:
ভুজঙ্গাসন ব্যায়ামকে অন্য যে কোনো ধরনের ব্যায়াম থেকে আলাদা করে এমন একটি বিষয় হল,মানসিক শান্তি। যোগ ব্যায়াম আপনার শরীরে খুশির হরমোন বৃদ্ধি করে ও মনের অবস্থা ভারসাম্যপূর্ণ করে ।
৯) সতেজ যোগব্যায়াম:
দীর্ঘদিনের চাপের পরে ভুজঙ্গাসন অনুসরণ করা যেতে পারে। এটি করার মাধ্যমে শরীর হারিয়ে যাওয়া শক্তি পূরণ করে। এছাড়াও, এটি সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এটি শরীরের কোষগুলিকে প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য করে।
১০) মাথাব্যথা ও উদ্বেগ পরিচালনা করা:
আজকাল চাপ ও উদ্বেগ সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এর ফলে আমাদের ক্লান্তি মাথা ব্যাথা ও বিষন্নতা দেখা দেয়।
যোগ ব্যায়াম অনুশীলনকারীরা ওষুধের বিকল্প হিসেবে চাপ উপসমকারি হিসেবে যোগব্যায়ামকে পরামর্শ দেন।
১১) মেজাজ বৃদ্ধিকারী:
ভুজঙ্গাসন হল একটি মেজাজ উন্নতকারী যা আমাদের চাপ কমায়। এটি আমাদের মানসিক সুস্থতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
১২) হজম শক্তি উন্নত করে ও বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
১৩) কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপা দূর করে।
১৪) সুস্থ ও খারাপ ভঙ্গী বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করে।
১৫) আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ।
১৬)সতর্কতা ও মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে।
কাদের ভুজঙ্গাসন পদ্ধতি এড়িয়ে চলা উচিত?
১) যাদের হাতে অসাড়তা বা ব্যথা তাদের ভুজঙ্গষণ করা উচিত নয়।
২)সাপের ভঙ্গির কারণে হাত পেট ও কাঁধেযে কোন আঘাত আরো খারাপ হতে পারে ।
৩) অস্ত্রপ্রচার থেকে সেরে উঠেছেন এমন ব্যক্তিদেরও এই যোগব্যায়াম ভঙ্গি এড়িয়ে চলা উচিত।
৪) হার্নিয়া রোগীদের কোবরা ভঙ্গি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৫) তীব্র ঘাড় ও মেরুদন্ডের ব্যথার রোগীদের কঠোর যোগব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত।
৬) পেট টান টান করলে ভ্রুণের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে। তাই গর্ভবতী মহিলাদের যোগব্যায়াম করা এড়িয়ে চলা উচিত।
সতর্কতা:
যদি পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকে তাহলে এই আসন করার সময় সতর্ক থাকবেন গর্ভাবস্থায় বা বজ্র:স্রাবের সময় এই আসন করা উচিত নয়। যদি কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে যোগ প্রশিক্ষক ও ডাক্তারের পরামর্শ করা বাঞ্ছনীয়।