লিচুর রসালো রত্ন গ্রীষ্মের মিষ্টি উপহার
লিচু :
১) গ্রীষ্মের প্রতীক্ষিত স্বাদ-টক মিষ্টি রসালো লিচু,শুধু স্বাদেই নয় পুষ্টিতেও ভরপুর।
২) গ্রীষ্মের সেরা উপহার লিচু । লিচু একটি মৌসুমী ফল সাধারণত গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়।
৩) লিচু গোলাকৃতি ও লালচে খোসা বিশিষ্ট ফল।
৪) লিচুর ভেতরে থাকে রসালো স্বচ্ছ সাদা শাঁস ও একটি বড় বীজ।
৫) লিচু একটি সুগন্ধ যুক্ত মিষ্টি ফল।
লিচুর পুষ্টিগুণ:
ক্যালরি ,কার্বোহাইড্রেট ,ভিটামিন সি ,ফাইবার, প্রোটিন ,চর্বি, চিনি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনাল সমৃদ্ধ।
লিচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় উচ্চ ভিটামিন সি এর জন্য ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করে হজমে সহায়তা করে অ্যান্টি এজিং ও আন্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব রাখে রক্তচাপ নিদ্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি কার্ডিওভাসকুলার স্ট্রেস পরিচালনা করে,যা ধমনীতে সহজে রক্ত প্রবাহের সাহায্য করে।
২) হজমে সাহায্য করে:
যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য লিচু ফল উপকারী-লিচু ফলের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা ।এক গ্লাস লিচুর রস পান করা খুব উপকারী হতে পারে,কারণ এটি অস্বস্তির লক্ষণগুলিকে কমিয়ে দেয়। লিচুতে থাকে ফাইবার উপাদান মলের পরিমাণ বাড়ায় যা সাহায্য করে মসৃণ মলত্যাগ, এভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
৩) ওজন কমাতে সাহায্য করে:
লিচু ফাইবারের একটি বড় উৎস যা সাহায্য করে ওজন কমাতে। এছাড়াও লিচুতে ন্যূনতম চর্বি ও ক্যালরির সাথে জলের পরিমাণ বেশি থাকে।
৪) হাড়ের শক্তি বাড়ায়:
লিচু খাওয়ার অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি হাড়কে মজবুত করে। কারণ লিচুতে রয়েছে আয়রন,কপার, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ,ফসফরাস,
ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি। এই খনিজ গুলি ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায় ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়।এইভাবে আমাদের হাড় মজবুত করে।
৫) রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে:
কপার যা লিচুতে পাওয়া যায় আমাদের দেহে আয়রনের মতই অত্যাবশ্য। লিচুতে তামা থাকার কারণে লোহিত কণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এটি বয়স্ক ব্যাক্তিদের জন্য খুব উপকারী। কারণ এটি সঠিক রকম সঞ্চালনের সাহায্য করে।
৬) ত্বকের যত্নের সুবিধে:
লিচু ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলির মধ্যে রয়েছে ফ্রী রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে যা ত্বকের ক্ষতি করে,যার ফলে বলি রেখা ,দাগ ,শুষ্ক রেখা ও বার্ধক্যজনিত অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়।এছাড়াও,লিচুতে থাকে ভিটামিন ই রোদে পোড়া, জ্বালাপোড়া ব্যথা ও ত্বকের ক্ষতির থেকে রক্ষা করতে পারে।
৭) স্বাস্থ্যকর বার্ধক্য:
লিচু খাবার অন্যান্য উপকারিতার মধ্যে রয়েছে এটি বার্ধক্য কমায়। লিচুতে পাওয়া ভিটামিন সি ফ্রী র্যাডিকেলের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে।এইভাবে বার্ধক্যের অকাল লক্ষণ গুলি প্রতিরোধ করে ও বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
৮) লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
লিচুতে উপস্থিত পলিফেনাল লিভারের ক্ষতি কমাতে পারে ও অ্যালকোহল প্রতিরোধ করতে পারে।
৯) ডায়াবেটিসের জন্য সেরা:
যেহেতু লিচু পলিফেনলের একটি সমৃদ্ধ উৎস তাই গবেষণায় বলা হয়েছে যে পলি ফেনাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও লিচুর বীজের নির্যাস এর পলিফেনালগুলি লক্ষণগুলির উন্নতি করতে পারে।
১০) অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিচুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।এটি শরীরের ফ্রি মেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। লিচুতে প্রচুর পরিমাণে পলিস্যাকারাইড রয়েছে ও পলিফেনলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার সহ বিভিন্ন অবস্থা প্রতিরোধ করতে পারে।
১১) ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়:
লিচুতে রয়েছে পলিফেনাল ও পলিস্যাকারাইড এর মত উপাদান যা ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমানোর জন্য দায়ী হতে পারে।
লিচুর অপকারিতা:
১) রক্তচাপ কমে যাওয়া:
অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে ।
২) ওজন বৃদ্ধি:
লিচুতে ক্যালরি বেশি না থাকলে ও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
৩) পেটে সমস্যা:
বেশি পরিমাণে লিচু খেলে পেট ব্যথা,পেটের সমস্যা ,এসিডিটি ও বমি হতে পারে।
৪) রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া:
লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামক একটি উপাদান থাকে যা শরীরে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে খেলে ।
৫) শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:
অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
৫) শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা:
অতিরিক্ত লিচু খেলে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
৬) অন্যান্য সমস্যা:
অতিরিক্ত লিচু খেলে গলা ব্যাথা ,মুখের ভেতরে ঘা , বা নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা:
১) লিচুর বীজে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকে যা খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
২) লিচু খাওয়ার সময় যে বিষয়গুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।পরিমিত পরিমাণ লিচু খাওয়া উচিত।
৩) খালি পেটে লিচু খাওয়া উচিত নয়।
৪) ডায়াবেটিস বা কিডনির সমস্যা থাকলে লিচু খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫) লিচুর বীজ কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
৬) গর্ভবতী মহিলা বুকের দুধ খাওয়ানো মা শিশু ও যারা ওষুধ খাচ্ছেন তাদের লিচু খাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।