মাঠের ধারে পাকা কাঁঠালের (Jackfruit) ঘ্রাণে যেন ছড়িয়ে পড়ে শৈশবের গ্রীষ্মকাল
বাংলার প্রতি গ্রীষ্ম যেন শুরু হয় কাঁঠালের মিষ্টি সুবাসে। শুধু ফল নয় কাঁঠাল এক ঐতিহ্য এক স্মৃতি এক চিরচেনা গ্রামীন গল্প ।
কাঁঠাল: ইংরেজি নাম:(Jackfruit)
বৈজ্ঞানিক নাম: Artocarpus heterophyllus
ফলের বৈশিষ্ট্য :
ওজন একটি কাঁঠাল সাধারণত ৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে ।
চামড়া মোটা ও কাটাযুক্ত।
ভেতরের অংশ সুগন্ধিযুক্ত পাকা কোয়া (বীজ ঘেরা) যা খাওয়ার যোগ্য।
রঙ ভেতরের কোয়া সাধারণত হলুদ বা কমলা রঙের ।
বীজ বড় ও পুষ্টিকর সিদ্ধ করে খাওয়া যায়।
কাঁঠালের নানাবিধ ব্যবহার,পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা:
কাঁঠাল একটি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল ,যা ভিটামিন,খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। এটি ভিটামিন A,C,B-১,B-২,পটাশিয়াম ,ক্যালশিয়াম ,ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ভালো উৎসব কাঁঠালের কিছু ঊল্লেখযোগ্য গুণ,পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো:
কাঁঠাল খাওয়ার কয়েকটি উপায় নিচে দেওয়া হল:
১) পাকা কাঁঠাল ফল, জুস ,আইসক্রিম, জেলি বা মিষ্টি তৈরিতে ও ফলের সালাদে ও ব্যবহার করা যায়।
২) বিকল্প মাংস:
কাঁঠাল নিরামিষাসীদের জন্য একটি জনপ্রিয় বিকল্প,কারণ এটি মাংসের মত স্বাদ ও টেক্সচার যুক্ত এটি বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩) কাঁচা কাঁঠাল তরকারি ,ভাজা বা মাংসের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায় ।
৪) আলুর মতো করে রান্না করা যায় ।
৫) সিদ্ধ বা ভেজে খাওয়া যায় ।
৬) ময়দা বানিয়ে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা যায়।
কাঠের ব্যবহার:
১) আসবাবপত্র :
কাঁঠাল গাছের কাঠ খুব টেকসই ও উইপোকা প্রতিরোধী, তাই এটি আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় যেমন-টেবিল ,চেয়ার, আলমারি ইত্যাদি।
২) নির্মাণ কাজে:
দরজা জানালা ও ছাদ তৈরীতে ও কাঁঠাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়।
৩) বাদ্যযন্ত্র:
কিছু বাদ্যযন্ত্র তৈরিতেও কাঁঠাল গাছের কাঠ ব্যবহৃত হয় ।
অন্যান্য ব্যবহার:
১) ঐতিহ্যগত ঔষধ:
কাঁঠাল গাছের শিকড় ও পাতা ঐতিহ্যগতভাবে হাঁপানি,জ্বর, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের চিকিৎসায় বব্যবহার হয়।
২) আঠা:
কাঁঠাল গাছের আঠা কাঠ বা বিভিন্ন পাত্রের ছিদ্র বন্ধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩) ছাল :
কাঁঠাল গাছের ছাল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টিগুণ:
১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
কাঁঠালে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
২) হজম শক্তি উন্নত করে:
এতে থাকা ফাইবার আমাদের হজম প্রক্রিয়াটি উন্নত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩) ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:
ভিটামিন-A এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
৪) দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে:
ভিটামিন-A ও বিটা ক্যারোটিন আমাদের চোখের জন্য উপকারী।
৫) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৬) শক্তি সরবরাহ করে:
শর্করা,ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ দ্রুত আমাদের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।
৭) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
কম ক্যালরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্ষুধা কমায় ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৮) ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক :
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৯) ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে:
ভিটামিন-C আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
১০) এছাড়া ও কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ,শ্বেতসার ,খনিজ পদার্থ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সহায়ক ,ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ,হৃদরোগের জন্য উপকারী, ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সতর্কতা:
১) যেহেতু কাঁঠাল রক্ত জমাট বাঁধার গতি বাড়িয়ে দেয় তাই যাদের রক্ত সম্পর্কিত কোনো সমস্যা রয়েছে তাদের কাঁঠাল না খাওয়ায় ঊচিত।
২) যাদের পেটে ব্যথা,ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কিংবা ওভারিয়ান সিষ্ট রয়েছে তাদেরও কাঁঠাল এড়িয়ে চলা উচিত।
কাঁঠাল খেয়ে যেসব খাবার খাওয়া ঠিক নয়
১) ঢেঁড়স কাঁঠাল খাবার পর কখনোই ঢেঁড়স খাওয়া উচিত নয় ।
২) পেঁপে কাঁঠালের সঙ্গে পেঁপে খাওয়া ঠিক নয়।
৩) দুধ কাঁঠাল খাওয়ার পর দুধ খাওয়া ঠিক নয়।
৪) কিছু ক্ষেত্রে কাঁঠাল খেলে এলার্জি হতে পারে।
৫) ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁঠাল খাওয়া উচিত নয় কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকে।
পরিশেষে বলি,শক্ত খোলসের ভেতর লুকিয়ে থাকা সোনালী রসের কোয়া-এটাই কাঁঠালের গল্প।