
সস্তায় পুষ্টি, গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ- খেসারি ডাল
সস্তায় পুষ্টি ,ঐতিহ্যবাহী স্বাদের ডাল-খেসারি ডাল (Lathyrus sativus) দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত এক সস্তা ও জনপ্রিয় খাদ্যশস্য। এটি প্রধানত শীতকালে চাষ হয় এবং দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের কাছে পুষ্টির সহজলভ্য উৎস হিসেবে পরিচিত। বাংলার গ্রামীণ রান্নায় খেসারি ডাল পান্তা ভাত, ভাত বা রুটি–লুচির সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। সস্তা, সহজলভ্য ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণযোগ্য হওয়ায় এটি গ্রামীণ জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
পুষ্টিগুণ:
খেসারি ডাল সস্তা হলেও এতে পর্যাপ্ত পুষ্টি রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো খেসারি ডালে গড়ে প্রায় ২৫-২৬ গ্রাম প্রোটিন, ৫৫-৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং প্রায় ১-২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। খাদ্য আঁশের পরিমাণও যথেষ্ট থাকায় এটি হজমে উপকারী। তবে খেসারি ডালে BOAA (Beta-N-oxalyl-L-alpha,beta-diaminopropionic acid) নামক এক প্রকার টক্সিন থাকে, যা দীর্ঘদিন অতিরিক্ত খেলে ল্যাথিরিজম নামক পক্ষাঘাতজনিত রোগের কারণ হতে পারে।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১) সুলভ প্রোটিনের উৎস:
খেসারি ডাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য প্রোটিনের একটি বড় উৎস
২) হজমে উপকারি:
উচ্চ খাদ্য আঁশ অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
৩) শক্তি জোগায়:
খেসারি ডালের কার্বোহাইড্রেট ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে, ফলে শ্রমজীবী মানুষের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য।
৪) রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সামান্য ভূমিকা:
আয়রন থাকায় এটি কিছুটা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক।
৫) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
কম ফ্যাট এবং উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
বিশেষ সতর্কতা:
খেসারি ডাল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে BOAA নামক টক্সিন স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যার ফলে ল্যাথিরিজম নামক পক্ষাঘাতজনিত রোগ হতে পারে। তবে পরিমিত মাত্রায় এবং সঠিকভাবে রান্না করলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। রান্নার আগে ডাল ভালোভাবে ধুয়ে ৮-১০ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এবং সেই পানি ফেলে দিয়ে রান্না করলে টক্সিনের পরিমাণ কিছুটা কমে।
রান্নায় ব্যবহার:
খেসারি ডাল দিয়ে তৈরি হয় খেসারি ডাল ভুনা, খেসারি ডাল ডিমের ঝোল, সবজি দিয়ে ডাল, এমনকি খেসারি ডাল বড়া। পান্তা ভাত ও মুড়ির সঙ্গে খেসারি ডাল ভুনা গ্রামীণ বাংলায় বিশেষ জনপ্রিয়।
উপসংহার:
খেসারি ডাল সস্তা, পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য হলেও এটি নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে রান্না করে খেলে এটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের উৎস হতে পারে। সুস্থ জীবনযাপনের জন্য খেসারি ডাল খাওয়ার সময় সচেতনতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

