
কালো মটরশুঁটি : পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও ব্যবহার
কালো মটরশুঁটি (Black Gram বা Urad Dal) এক ধরনের ডাল যা দক্ষিণ এশিয়ার রান্নায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত। বাইরের খোসা কালো এবং ভেতরের অংশ সাদা রঙের। প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ এই ডাল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের জন্য নানা উপকার পাওয়া যায়।
পুষ্টিগুণ:
কালো মটরশুঁটিতে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়ক। ১০০ গ্রাম কাঁচা কালো মটরশুঁটিতে গড়ে প্রায় ২৫ গ্রাম প্রোটিন, ১.৫ গ্রাম চর্বি, ৩০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যআঁশ (Dietary Fiber) থাকে। এছাড়া এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসে সমৃদ্ধ।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
১) পেশি ও হাড় মজবুত করে:
উচ্চ প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি শরীরের হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী রাখে।
২) হজমশক্তি বৃদ্ধি:
এতে থাকা খাদ্যআঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে।
৩) হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা:
কালো মটরশুঁটি রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৪) শক্তি বৃদ্ধি:
এটি জটিল কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগতে দেয় না।
৫) রক্তস্বল্পতা দূর করে:
আয়রনের উপস্থিতি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।
ব্যবহার ও রান্না:
কালো মটরশুঁটি বিভিন্ন ধরনের রান্নায় ব্যবহার করা হয়—ডাল, কারি, খিচুড়ি, বড়া ইত্যাদি। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত ডাল মাখানি বা ইডলি-দোসা ব্যাটার তৈরিতেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। রান্নার আগে মটরশুঁটি ভিজিয়ে রাখলে এটি দ্রুত সিদ্ধ হয় এবং হজম সহজ হয়।
সংরক্ষণ পদ্ধতি
শুকনো কালো মটরশুঁটি বায়ুরোধী পাত্রে রেখে শীতল ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করা উচিত। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে এটি কয়েক মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। সিদ্ধ বা ভেজানো মটরশুঁটি অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে, যাতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি না পায়।
বিশেষ সতর্কতা
কিছু মানুষের জন্য কালো মটরশুঁটি গ্যাস বা অম্বল তৈরি করতে পারে। এজন্য রান্নার সময় হিং বা আদা ব্যবহার করা ভালো। অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো উচিত, বিশেষত যাদের হজম সমস্যা বা কিডনির অসুবিধা আছে।
কালো মটরশুঁটি শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে এটি শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদি উপকার বয়ে আনতে পারে।

