
সেপটিক (Sepsis) হওয়ার থেকে বাঁচতে কি করা উচিত
সেপটিক বা সেপসিস একটি অত্যন্ত গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সাধারণত শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ঘটে। এটি রক্তে সংক্রমণ তৈরি করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক সময় সময়মতো চিকিৎসা না করলে এটি জীবনহানির কারণও হতে পারে। তাই সেপটিক হওয়ার আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
১. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
• নিয়মিত হাত ধোয়া উচিত, বিশেষ করে খাবার খাওয়ার আগে, বাথরুম ব্যবহার করার পর এবং বাইরের পরিবেশ থেকে আসার পর।
• ক্ষত বা কাটা-ছেঁড়া হলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত।
• নোংরা বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা জরুরি।
২. শরীরে কোনো ক্ষত অবহেলা না করা
• অনেক সময় ছোটখাটো ক্ষত বা কাটা অবহেলা করলে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং ধীরে ধীরে সেপটিক হতে পারে।
• ক্ষতস্থানে লালচে ভাব, ফোলা বা পুঁজ জমলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
• ক্ষত যতদিন না শুকাচ্ছে ততদিন নিয়মিত পরিষ্কার করে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
৩. সংক্রমণ প্রতিরোধে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ
• সাধারণ জ্বর, নিউমোনিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ত্বকের সংক্রমণও সঠিক চিকিৎসা না করলে সেপটিকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
• কোনো সংক্রমণকে হালকাভাবে নেয়া যাবে না।
• ডাক্তার যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দেন, তা পূর্ণ কোর্স সম্পূর্ণ করতে হবে। মাঝপথে বন্ধ করলে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে, যা পরে • বড় বিপদ ডেকে আনে।
৪. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখা
• সেপটিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।
• পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, যেমন শাকসবজি, ফল, মাছ, ডিম, দুধ।
• পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে।
• নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে।
• ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত, কারণ এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে।
৫. অপারেশনের পর যত্ন
• অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
• চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ড্রেসিং ও ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।
•জ্বর, ব্যথা, অস্বাভাবিক ফোলা বা রক্তপাত হলে দেরি না করে ডাক্তারকে জানাতে হবে।
৬. শিশু ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন
• শিশু ও বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল। ফলে তাদের সংক্রমণ হলে দ্রুত সেপটিক হতে পারে।
• শিশুদের টিকা সম্পূর্ণ করাতে হবে।
• বৃদ্ধদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি বা ফুসফুসের সমস্যার ক্ষেত্রে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে।
৭. ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের অতিরিক্ত সতর্কতা
• ডায়াবেটিস, লিভার ডিজিজ, ক্যান্সার বা দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ (যেমন স্টেরয়েড) ব্যবহারকারীদের সেপটিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাদের—
• ক্ষত বা সংক্রমণ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
• নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।
৮. ভ্যাকসিন গ্রহণ
• কিছু ক্ষেত্রে টিকা সেপসিস প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন—
• নিউমোনিয়া প্রতিরোধে পেনুমোকক্কাল ভ্যাকসিন।
• ফ্লু ভ্যাকসিন।
• এই টিকা শরীরকে গুরুতর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
৯. সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করা
• প্রাথমিকভাবে যদি সংক্রমণ চিহ্নিত করা যায়, তবে সেপটিক হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
• দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, শরীরের কোথাও অস্বাভাবিক ফোলা, শ্বাসকষ্ট, প্রস্রাবে জ্বালা বা পুঁজ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিতে হবে।
• চিকিৎসকের কাছে রোগের ইতিহাস বিস্তারিত জানানো উচিত।
সেপটিক একটি মারাত্মক অবস্থা, তবে সচেতনতা ও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এর ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, ক্ষত বা সংক্রমণ অবহেলা না করা, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া—এসবই সেপসিস প্রতিরোধের কার্যকর উপায়। মনে রাখতে হবে, সংক্রমণ কখনোই ছোট নয়; তাই প্রাথমিক পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া জীবন বাঁচাতে পারে।

