
দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) হওয়ার লক্ষণ কি?
বর্তমান সময় দাঁতের সমস্যা (Dental Problems) বিশ্বজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য-সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে। দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) হলে সেটা শুধু সৌন্দর্যের ক্ষতি করে না, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, খাবার খাওয়ার অভ্যাস এবং সার্বিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) হওয়ার পিছনে নানা কারণ থাকলেও প্রধানত অপর্যাপ্ত দাঁতের যত্ন, অপুষ্টি এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসই এর মূল কারণ।
প্রথমত, দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া খুব জরুরী। অনেকেই প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করেন বটে, কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে করেন না। এর ফলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণু ধীরে ধীরে এনামেলের ক্ষতি করে এবং দাঁত ক্ষয়ে (Tooth Decay) যায়। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে দাঁত পড়ে যাওয়া বা দাঁতে ক্ষয় হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক জীবনে ফাস্টফুড, চিনি সমৃদ্ধ খাবার ও বিভিন্ন রকমের পানীয়র ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসব খাবার দাঁতের গর্ত বা ক্যাভিটি তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) বাড়ায়। অন্যদিকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতিও দাঁতকে দুর্বল করে তোলে। দুধ, ডিম, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খাবারে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যদি শরীরে কম পৌঁছায়, তবে দাঁতের শিকড় দুর্বল হয় এবং দাঁত ভেঙে পড়তে শুরু করে।
তৃতীয়ত, ধূমপান ও মদ্যপানের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস দাঁতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। তামাকে থাকা নিকোটিন দাঁতের মাড়িকে দুর্বল করে এবং রক্তসঞ্চালন ব্যাহত করে। একইসঙ্গে মদ্যপানের ফলে মুখ শুষ্ক হয়ে যায়, লালা নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। লালা দাঁত রক্ষার একটি প্রাকৃতিক প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এটি কমে গেলে দাঁত জীবাণুর আক্রমণে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চতুর্থত, দাঁতের ক্ষয়ের (Tooth Decay) সঙ্গে বংশগত কারণও জড়িত। অনেকের জন্মগতভাবেই কিছু দাঁতের গঠন দুর্বল হয় বা সঠিকভাবে বের হয় না। আবার ডায়াবেটিস, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা কিংবা বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগ দাঁতের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
শিশুদের ক্ষেত্রেও দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) হওয়ার সমস্যা দ্রুত দেখা দেয় যদি তারা অতিরিক্ত মিষ্টি বা চকোলেট খায় এবং দাঁতের যত্ন নেয় না। আবার অন্যদিকে বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং মাড়ির সমস্যা বেড়ে যাওয়া দাঁত পরার প্রধান কারণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) রোধ করতে হলে সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে ব্রাশ করা, নিয়মিত ডেন্টিস্টের কাছে চেক-আপ করা অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বেশি করে দুধ, শাকসবজি, ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিৎ। ধূমপান ও মদ্যপানের মতো অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে।
সমাজে এখন অনেকেই মনে করেন দাঁতের সমস্যাকে (Dental Problems) অবহেলা করা যায়, কিন্তু দাঁতের ক্ষয় (Tooth Decay) হওয়া একবার শুরু হলে তা আর পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই শুরু থেকেই যত্ন নেওয়াই একমাত্র উপায়।
দাঁতের স্বাস্থ্য শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। তাই বিশেষজ্ঞরা সবাইকে দাঁতের যত্নে মনোযোগী হওয়ার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন।

