
হেয়ার কালার (Hair Colour) ব্যবহার করা চুলের জন্য কতটা উপকারি
হেয়ার কালার (Hair Colour) ব্যবহার করা আজকের দিনে অনেকেরই ফ্যাশনের অংশ হয়ে গেছে। তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী মানুষ পর্যন্ত অনেকেই এখন নিজের চুলে রঙ করতে পছন্দ করেন কেউ ট্রেন্ড ফলো করতে, কেউ আবার সাদা চুল ঢাকতে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হেয়ার কালার (Hair Colour) আসলে চুলের জন্য উপকারি, নাকি ক্ষতিকর? এই বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে চুলের প্রকৃতি, হেয়ার কালারের (Hair Colour) উপাদান, এবং তার প্রভাব।
হেয়ার কালার (Hair Colour) ব্যবহারের উদ্দেশ্য
প্রথমেই জানা দরকার, মানুষ কেন চুলে রঙ করে? সাধারণত তিনটি কারণ দেখা যায়।
• সৌন্দর্যবর্ধন ও স্টাইল পরিবর্তন করার জন্য — অনেকেই নিজের লুক পরিবর্তন করতে বা নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চুলে রঙ করেন।
• সাদা চুল ঢাকতে — বয়স বাড়লে অনেকেরই চুলে সাদা হয়ে যেতে দেখা যায়, তখন কালার করা হয় চুলকে তরুণ দেখানোর জন্য।
• ব্যক্তিত্ব প্রকাশে — আজকাল অনেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব বা মানসিক অবস্থার প্রকাশে বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করেন, যেমন: ব্লন্ড, বার্গান্ডি, রেড, ব্লু ইত্যাদি।
হেয়ার কালারের (Hair Colour) ধরন
বাজারে বিভিন্ন ধরণের হেয়ার কালার (Hair Colour) পাওয়া যায়, এবং তাদের প্রভাবও আলাদা। সাধারণভাবে বলা যায় তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
• অস্থায়ী রঙ (Temporary Hair Colour)
একবার শ্যাম্পু করলেই চলে যায়। এতে অ্যামোনিয়া বা ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে না। পার্টি বা অনুষ্ঠানের জন্য যারা একদিনের জন্য রঙ করতে চান, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প।
• আধা-স্থায়ী রঙ (Semi-permanent Hair Colour)
এটি কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী। সাধারণত ৫–১০ বার চুল ধোয়া পর্যন্ত রঙ টেকে। এতে অ্যামোনিয়া থাকে না, তাই তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর।
• স্থায়ী রঙ (Permanent Hair Colour)
এই রঙ চুলের ভেতরের স্তরে প্রবেশ করে এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকে। এতে অ্যামোনিয়া, পারঅক্সাইড, ও অন্যান্য শক্তিশালী কেমিক্যাল থাকে যা চুলের প্রাকৃতিক প্রোটিন স্তরকে পরিবর্তন করে।
হেয়ার কালারের উপকারিতা
যদিও হেয়ার কালার (Hair Colour) নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে, তবুও কিছু উপকারিতা একদমই অস্বীকার করা যায় না।
• আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে
নতুন রঙের চুল মানুষকে আলাদা করে তোলে, এর ফলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। অনেকেই মনে করেন নতুন চুলের রঙ তাদের লুককে ফ্রেশ করে তোলে এবং মনোবল বাড়ায়।
• সাদা চুল ঢেকে দেয়
যারা চুল সাদা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি বেশ উপকারি। কালার চুলকে তরুণ ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
• স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব প্রকাশে সহায়তা করে
অনেক সময় একজন মানুষের চুলের রঙই তার চরিত্র বা পছন্দের প্রকাশ করে। এটি একধরনের আত্ম-প্রকাশের মাধ্যমও হতে পারে।
• কিছু কালার পুষ্টিগুণ যুক্ত করে
কিছু আধুনিক ব্র্যান্ডের কালারে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন– অ্যালোভেরা, আর্গান অয়েল, কেরাটিন, আমলা ইত্যাদি থাকে, যা চুলকে নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
হেয়ার কালারের (Hair Colour) ক্ষতিকর দিক
তবে শুধুমাত্র উপকারিতার দিক দেখলে ভুল হবে। দীর্ঘমেয়াদে বা ভুলভাবে ব্যবহারে হেয়ার কালার (Hair Colour) চুলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
• চুলের প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা নষ্ট করে
অধিকাংশ হেয়ার কালারে (Hair Colour) অ্যামোনিয়া থাকে যা চুলের কিউটিকল খুলে দেয় এবং প্রাকৃতিক তেল কমিয়ে দেয়। এতে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়।
• চুল ভেঙে যাওয়া ও পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়
কালারের কেমিক্যাল চুলের গঠন দুর্বল করে, ফলে সহজে ভেঙে যায় বা পড়ে যায়।
• কিছু মানুষের ত্বক সংবেদনশীল হওয়ায় কালারের রাসায়নিক উপাদান ত্বকে জ্বালাপোড়া, চুলকানি বা র্যাশ তৈরি করতে পারে।
চুলের রঙের মান নষ্ট হয়
• ঘন ঘন কালার করলে চুলের প্রাকৃতিক কালো বা বাদামি রঙ হারিয়ে ফেলে এবং ফিকে বা বিবর্ণ হয়ে যায়।
• বারবার ব্লিচ ব্যবহার করলে চুলের ভেতরের প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়, ফলে চুল প্রাণহীন ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রাকৃতিক বিকল্প
যারা চুলে রঙ করতে চান কিন্তু কেমিক্যাল এড়াতে চান, তাদের জন্য কিছু প্রাকৃতিক বিকল্প রয়েছে:
১. হেনা – হেনা প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত। এটি চুলে লালচে বাদামি আভা দেয় এবং চুলকে মজবুত করে।
২. ইন্ডিগো পাউডার – হেনার সঙ্গে ব্যবহার করলে কালো রঙ দেয়।
৩. কফি বা কালো চা – অল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী বাদামি টোন দিতে পারে।
৪. বিটরুট বা গাজরের রস – প্রাকৃতিকভাবে হালকা লালচে রঙ দিতে পারে।
এসব উপাদান যদিও স্থায়ী রঙ দেয় না, তবুও চুলের ক্ষতি করে না বরং পুষ্টি জোগায়।
হেয়ার কালার (Hair Colour) ব্যবহারের আগে করণীয়
হেয়ার কালার (Hair Colour) করার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মানা উচিৎ, যাতে ক্ষতি কম হয়।
১. চুলে তেল লাগান
কালার করার ১-২ দিন আগে নারকেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন, এতে স্কাল্প শুষ্ক হবে না।
২. বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড ব্যবহার করুন
অচেনা বা সস্তা পণ্য এড়িয়ে চলুন। ভালো ব্র্যান্ডের কালারে তুলনামূলক কম ক্ষতিকর উপাদান থাকে।
৩. চুলে ডিপ কন্ডিশনিং করুন
কালার করার পরে চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে মাসে অন্তত একবার ডিপ কন্ডিশনিং বা হেয়ার স্পা করুন।
হেয়ার কালারের (Hair Colour) পরবর্তী যত্ন
চুলে রঙ করার পর চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া ভীষণ জরুরী।
• সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
• গরম জলে চুল ধোবেন না, কারণ এতে রঙ দ্রুত ফিকে হয়ে যায়।
• সূর্যের আলোতে দীর্ঘক্ষণ থাকলে স্কার্ফ বা ক্যাপ ব্যবহার করুন।
• রঙ করার পর অন্তত ৪৮ ঘণ্টা চুলে জল দেবেন না।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায়, হেয়ার কালার (Hair Colour) ব্যবহার করা কোনো খারাপ বিষয় নয়, তবে এটি কীভাবে ও কতটা ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপরই নির্ভর করে এর প্রভাব। সীমিত পরিমাণে, সঠিক উপাদান বেছে নিয়ে, এবং যথাযথ যত্ন নিলে কালার করা চুলও সুস্থ ও সুন্দর থাকতে পারে। কিন্তু যারা খুব ঘন ঘন কালার করেন বা ব্লিচ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সৌন্দর্যের পাশাপাশি নিজের চুলের স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দিন।

