
সুষনি শাক: গ্রামীণ আঙিনার হারিয়ে যাওয়া ভেষজ রত্ন
সুষনি শাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Marsilea minuta) বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় একটি পরিচিত জলজ শাক। অনেকেই একে “জলসাগ” বা “পানিশাক” নামেও চেনেন। এটি মূলত ধানক্ষেত, জলাভূমি বা পুকুরের ধারে প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। এর চারপাতাওয়ালা পাতা দেখতে অনেকটা ক্লোভার পাতার মতো এবং মাটির ওপর বিছানো থাকে। সুষনি শাক যেমন সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিগুণ ও ভেষজ গুণেও ভরপুর।
পুষ্টিগুণ:
সুষনি শাকের মধ্যে রয়েছে
১) ভিটামিন A ও C: চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২) আয়রন ও ক্যালসিয়াম: রক্তস্বল্পতা দূর করে ও হাড় মজবুত করে।
৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: শরীরের কোষে অক্সিডেটিভ চাপ কমায় এবং বার্ধক্য রোধে সাহায্য করে।
৪) ফাইবার: হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
ভেষজ উপকারিতা:
১) জ্বর ও সর্দি উপশমে:
লোকজ চিকিৎসায় সুষনি শাকের রস ঠান্ডাজনিত জ্বর ও সর্দিতে ব্যবহার করা হয়।
২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
নিয়মিত খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে বলে অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের মত।
৩) কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়:
সুষনি শাকের প্রস্রাববর্ধক গুণ রয়েছে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং কিডনিকে সজীব রাখে।
৪) চর্মরোগ উপশমে:
শাকের পেস্ট বানিয়ে চর্মরোগের স্থানে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
খাওয়ার পদ্ধতি:
সুষনি শাক সাধারণত ভাজি, ভর্তা বা ডাল দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। তবে অল্প ভাজা অবস্থায় খেলে পুষ্টিগুণ সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত থাকে। অনেকে গ্রামীণ ঘরের ধাঁচে এটি চিচিঙ্গা বা কুমড়োর সাথে রান্না করে থাকেন।
বিশেষ সতর্কতা
যেহেতু এটি জলজ উদ্ভিদ, তাই রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অপরিষ্কার শাক খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
উপসংহার
সুষনি শাক প্রকৃতির এক অমূল্য উপহার, যা শরীরের জন্য নানা দিক থেকে উপকারী। আমাদের খাদ্যতালিকায় এই প্রায় বিস্মৃত শাককে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর যেমন পাবে প্রাকৃতিক পুষ্টি, তেমনি ফিরবে গ্রামীণ জীবনের সেই হারিয়ে যাওয়া স্বাদ ও স্বাস্থ্যের ভারসাম্য।

