
বিপাক শক্তি (Metabolic Energy) বৃদ্ধি করতে কি করা উচিৎ?
আমাদের শরীরকে সচল রাখতে প্রতিদিন শক্তির দরকার হয়। এই শক্তি আসে খাবার থেকে, আর খাবারকে ভেঙে শক্তিতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়াকেই বলে বিপাক বা মেটাবলিজম (Metabolism) কারও বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত হয়, আবার কারও ধীর হয়। দ্রুত বিপাকে (Metabolism) খাবার দ্রুত শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, ধীরে বিপাকে (Metabolism) সেই শক্তি জমা হয়ে চর্বি তৈরি করে। তাই সুস্থ শরীর ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিপাক শক্তি বাড়ানো খুব জরুরী।
১. সঠিক খাদ্যাভ্যাস:
• প্রোটিন (Protein) যুক্ত খাবার খাওয়া:
প্রোটিন (Protein) হজম করার সময় দেহ থেকে প্রচুর ক্যালরি বেরিয়ে যায়। তাই ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, দুধ ও বাদাম খেলে বিপাক (Metabolism) সক্রিয় থাকে।
• স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
শাকসবজি, ফলমূল ও সম্পূর্ণ শস্য দীর্ঘ সময় ধরে হজম হয়, ফলে বিপাক (Metabolism) সক্রিয় থাকে।
• বেশি করে জল খাওয়া:
শরীর জল শূন্য হলে বিপাক ধীর হয়ে যায়। দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া খুব দরকার এর ফলে বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolic Process) স্বাভাবিক থাকে।
• গ্রিন টি ও ব্ল্যাক কফি পান করা:
এতে থাকা ক্যাফেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিপাককে (Metabolism) কিছুটা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে গ্রিন টি ও ব্ল্যাক কফি অতিরিক্ত পান করা উচিৎ নয়।
২. ব্যায়াম (Exercise):
• কার্ডিও এক্সারসাইজ (Cardio Exercise) করা:
দৌড়ানো, হাঁটা, সাঁতার বা সাইকেল চালানোতে হৃদস্পন্দন (Heartbeat) ভালো থাকে ও তার সাথে বিপাক প্রক্রিয়ার (Metabolic Process) উন্নতি হয়।
• ওয়েট ট্রেনিং (Weight Training) করা:
পেশী তৈরির ব্যায়াম (Exercise) বিপাক (Metabolism) বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর। কারণ পেশী বিশ্রামের সময়ও শক্তি ব্যবহার করে।
• যোগ ব্যায়াম (Yoga) করা:
এগুলো শরীরকে নমনীয় রাখে ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে, ফলে বিপাক (Metabolism) ঠিক ভাবে কাজ করে।
৩. ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া:
অপর্যাপ্ত ঘুম বিপাককে (Metabolism) ধীর করে। প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ভালো ঘুমানো উচিৎ। পর্যাপ্ত ঘুম স্ট্রেস কমায় এবং বিপাক (Metabolism) সক্রিয় রাখে।
৪. অল্প অল্প করে খাওয়া:
একসাথে অনেক খাবার না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে ৪–৫ বার খাবেন। এতে হজম প্রক্রিয়া সবসময় সক্রিয় থাকবে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে বিপাক (Metabolism) ধীর হয়ে যায়।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা:
অতিরিক্ত স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে বিপাককে (Metabolism) ধীর করে দেয়। মেডিটেশন, বই পড়া, গান শোনা বা প্রিয় কাজে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমায়।
৬. বয়স ও পেশী ধরে রাখা:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশীর শক্তি কমে যায় এবং বিপাক (Metabolism) ধীর হয়। তাই বয়স যাই হোক না কেন, হালকা থেকে মাঝারি ওয়েট ট্রেনিং (Weight Training) করলে পেশী বজায় থাকবে ও বিপাক (Metabolism) সক্রিয় থাকবে।
৭. সূর্যালোক ও ভিটামিন ডি (Vitamin D) এর গুরুত্ব:
ভিটামিন ডি (Vitamin D) হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। সূর্যের আলো ছাড়াও মাছ, দুধ, ডিম এসব খাবার ভিটামিন ডি (Vitamin D) সরবরাহ করে।
৮. ক্ষতিকর অভ্যাস এড়িয়ে চলা:
অ্যালকোহল ও ধূমপান শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে দুর্বল করে, বিপাকও ধীর হয়। তাই এগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরী।
৯. মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া:
আদা, দারুচিনি, লাল মরিচ ইত্যাদি সাময়িকভাবে বিপাক (Metabolism) বাড়াতে সাহায্য করে। তাই খাবারে সামান্য মশলা উপকার দিতে পারে।
১০. আনন্দ ও হাসিতে থাকা:
হাসি ও আনন্দ মানসিক চাপ কমায়, হরমোন সক্রিয় করে এবং বিপাকে (Metabolism) ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিপাক (Metabolism) হল শরীরের শক্তির ইঞ্জিন। ইঞ্জিন যদি ভালোভাবে চলে, শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী থাকে। বিপাক (Metabolism) বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise), সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক শান্তি জরুরী। এগুলো জীবনযাত্রায় অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে বয়স বাড়লেও বিপাক শক্তি (Metabolic Energy) সক্রিয় থাকবে। তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই ছোট ছোটো পরিবর্তন শুরু করুন।

