
ফুসফুসের কার্যকারিতা (Lungs Function) ঠিক রাখতে কি করা উচিৎ?
আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য প্রতিটি অঙ্গের নিজস্ব কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ফুসফুসের (Lungs) কার্যক্ষমতা হল আমাদের বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি। কারণ ফুসফুস (Lungs) শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। ফুসফুসের কার্যকারিতা (Lungs Function) ঠিক থাকলে রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায়, শরীর সক্রিয় থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হয়। কিন্তু দূষণ, ধূমপান, অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে ফুসফুসের (Lungs) ক্ষতি হতে পারে।
ফুসফুস (Lungs) ঠিক রাখতে কি করতে হবে
১. ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকা:
ফুসফুসের (Lungs) সবচেয়ে বড় শত্রু হল সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্য। এতে থাকা নিকোটিন শ্বাসনালীতে জমে ফুসফুসের কোষ নষ্ট করে দেয়। দীর্ঘদিন ধূমপান করলে ক্যান্সার বা হাঁপানির ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিজে ধূমপান না করার পাশাপাশি প্যাসিভ স্মোক থেকেও দূরে থাকা জরুরী।
২. নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) করা:
শরীরচর্চা ফুসফুসকে (Lungs) সক্রিয় রাখে। বিশেষ করে দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম (Yoga)ও প্রণায়াম শ্বাসপ্রশ্বাসকে গভীর করে এবং ফুসফুসের (Lungs) অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম (Exercise) করলে শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশী শক্তিশালী হয়।
৩. দূষণ এড়িয়ে চলা:
বর্তমানে বায়ুদূষণ ফুসফুস (Lungs) রোগের একটি প্রধান কারণ। ধুলো, ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি দীর্ঘ সময় শ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে ফুসফুস (Lungs) দুর্বল হয়। তাই বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা, যানবাহনের ধোঁয়া এড়িয়ে চলা, ঘরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করা জরুরী।
৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
ফুসফুসের (Lungs) কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত জরুরী। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল, শাকসবজি (গাজর, পালং শাক, ব্রোকলি, টমেটো) ফুসফুসের (Lungs) কোষ রক্ষা করে। এবং ভিটামিন সি ও ই (Vitamin C And E) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শ্বাসনালীকে সুস্থ রাখে। আর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম, বীজে পাওয়া যায়) প্রদাহ কমিয়ে শ্বাসতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, ও পর্যাপ্ত জল পান করলে ফুসফুসের (Lungs) শ্লেষ্মা পাতলা থাকে, ফলে শ্বাস নিতে সুবিধা হয়।
৫. নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন:
গভীর শ্বাস নেওয়া বা বেলুন ফুলানোর মতো কার্যক্রম ফুসফুসের (Lungs) ক্ষমতা বাড়ায়। যোগব্যায়াম (Yoga) ফুসফুসের (Lungs) ভেতরে বাতাস চলাচল সহজ করে এবং অক্সিজেনের ক্ষমতা বাড়ায়।
৬. সংক্রমণ থেকে সতর্ক থাকা:
শরীরের যেকোনো সংক্রমণ বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা যক্ষ্মা ফুসফুসকে (Lungs) দুর্বল করে দেয়। তাই টিকা নেওয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা এবং অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব জরুরী।
৭. মানসিক চাপ কমানো:
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শ্বাসপ্রশ্বাসে প্রভাব ফেলে। যোগ, মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমিয়ে ফুসফুসের (Lungs) স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮. চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া:
যদি কারো আগে থেকেই হাঁপানি, অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে তবে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিয়মিত স্পাইরোমেট্রি টেস্ট বা ফুসফুস (Lungs) পরীক্ষা করলে প্রাথমিক অবস্থায় সমস্যাগুলো ধরা পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় ।
উপসংহার:
ফুসফুস (Lungs) সুস্থ থাকা মানে পুরো শরীর সুস্থ থাকা। ধূমপান ত্যাগ, দূষণ এড়ানো, সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম (Exercise) ও সঠিক জীবনযাপনই ফুসফুসের (Lungs) কার্যক্ষমতা বজায় রাখার মূল উপায়। এছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ ফুসফুস (Lungs) থাকলে আমরা শুধু দীর্ঘ জীবনই পাই না, বরং সক্রিয় ও কর্মক্ষম জীবনযাপন করতে পারি।

