করমচা: টক-মিষ্টি স্বাদের ঔষধিগুণে ভরপুর এক বিস্ময়কর গ্রামীণ ফল

“টক-ঝাল আচারের রাণী করমচা — পেট ভালো রাখে, স্বাদে মন ভরায়!”

ফলের নাম: করমচা

স্থানীয়ভাবে পরিচিত: করমজা, কড়মচি ইত্যাদি নামে।

ইংরেজি নাম: Carissa carandas

অন্যান্য ইংরেজি নাম: Bengal currant / Christ’s thorn

বৈজ্ঞানিক নাম: Carissa carandas

পরিবার: Apocynaceae

করমচার গাছ ও ফলের পরিচিতি:

১) করমচা একটি কাঁটাযুক্ত ঝোপ জাতীয় গাছ, যা সাধারণত গ্রামাঞ্চলে, রাস্তার ধারে বা মাঠের কিনারায় দেখা যায়।

২) গাছটি ২–৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়।

৩) করমচা ফল শুরুতে সবুজ, পরে গোলাপি থেকে গাঢ় বেগুনি বা কালচে রঙ ধারণ করে।

৪) ফলটি টক, মাঝে মাঝে মিষ্টি ও অত্যন্ত স্বাদযুক্ত হয়।

করমচার ব্যবহার পদ্ধতি / জনপ্রিয়তা:

১) আচার (পাঁচফোড়ন বা মশলাদার) ঘরে তৈরি টক-ঝাল আচার তৈরিতে অতি জনপ্রিয়।

২) চাটনি: করমচা দিয়ে ঝাল-মিষ্টি চাটনি তৈরি হয়।

৩) শরবত: পাকা করমচা থেকে তৈরি টক-মিষ্টি রিফ্রেশিং পানীয় করা যায়।

৪) জ্যাম ও জেলি: পাকা করমচা দিয়ে সুস্বাদু জ্যাম বা জেলি বানানো যায়।

৫) রান্নায় ব্যবহার: তরকারি বা ডালের সঙ্গে টক স্বাদ আনার জন্য ব্যবহার হয়।

করমচার পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা:

উপাদান ও উপকারিতা:

১) ভিটামিন সি (Vitamin C) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ঠান্ডা-সর্দি প্রতিরোধে সহায়ক।

২) আয়রন (Iron):রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৩) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য প্রতিরোধ করে, কোষের ক্ষয় রোধে সহায়ক

ফাইবার হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।

৪) অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ শরীরে ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।

করমচার ভেষজ গুণ (ঔষধি ব্যবহার):

১) ডায়রিয়া ও পেট খারাপের জন্য উপকারী — শুকনো করমচা গুড়ো করে খাওয়া হয়।

২) হজম শক্তি বাড়ায় — করমচা চাটনি বা টক খাবার খেলে হজমে সুবিধা হয়।

৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক — পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় উপকারী।

৪) ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী — প্রাকৃতিক টক-মিষ্টি স্বাদে চিনি ছাড়া খাওয়া যায়।

করমচার চাষ ও মৌসুম:

১) ফুল ফোটে: মার্চ–এপ্রিল মাসে।

২) ফল পাকে: জুন–আগস্ট

৩) গাছটি খরাপ্রবণ ও অনুর্বর জমিতেও ভালো জন্মে এবং রক্ষণাবেক্ষণ কম লাগে।

বিশেষ সতর্কতা:

১) অপরিপক্ক ফল বেশি খেলে পেট খারাপ বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

২) অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে।

করমচা গ্রামীণ সংস্কৃতিতে:

১) গ্রামীণ বাংলার ঘরে ঘরে করমচা আচারের জার দেখা যায়।

২) ছোটবেলার “টক ফল” স্মৃতির সঙ্গে জড়িত করমচা চাটনি বা গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া।

৩) কাঁটাযুক্ত গাছ হওয়ায় বাড়ির চারপাশে বেড়া হিসেবে এটি রোপণ করা হয়।

উপসংহার:

করমচা শুধু একটি টক-মিষ্টি স্বাদের ফল নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ ভেষজ ভাণ্ডার। সহজলভ্যতা, বহু রকম রান্নায় ব্যবহারযোগ্যতা, এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় এটি গ্রীষ্মকালের এক অনন্য ফল। যারা গ্রামীণ স্বাদের প্রেমিক, তাদের জন্য করমচা একদম আবশ্যিক খাদ্য উপাদান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version