পেয়ারা (Guava) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি?

আমাদের আশেপাশে যত ফল পাওয়া যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য ও উপকারি একটি ফল হল পেয়ারা (Guava)। শহর থেকে গ্রাম, প্রায় সব জায়গাতেই এই ফল পাওয়া যায়। ছোট থেকে বড় সবার কাছেই এটি সমান প্রিয়। শুধু স্বাদের জন্য নয়, পেয়ারার (Guava) মধ্যে যে পুষ্টিগুণ লুকিয়ে আছে, তা আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।

পেয়ারা (Guava) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি এবং কেন আমাদের নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পেয়ারা (Guava) রাখা উচিৎ চলুন জেনে নি

১. ভিটামিন সি (Vitamin C) এর ভাণ্ডার:

পেয়ারাকে (Guava) অনেক সময় পুষ্টির পাওয়ারহাউস” (Powerhouse Of Nutrition) বলা হয়। একটি মাঝারি আকারের পেয়ারায় (Guava) লেবুর চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি (Vitamin C) থাকে। এই ভিটামিন (Vitamin) আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে সর্দি-কাশি বা সাধারণ ইনফেকশন থেকে শরীর দ্রুত সেরে ওঠে। এছাড়াও ভিটামিন সি (Vitamin C) ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এবং ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত পেয়ারা (Guava) খেলে ত্বক থাকে সতেজ ও সুন্দর।

২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

পেয়ারাতে (Guava) গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম থাকে। অর্থাৎ পেয়ারা (Guava) খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেয়ারা (Guava) এক অসাধারণ ফল। শুধু তাই নয়, পেয়ারা (Guava) হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তে চিনি শোষণ ধীরে ধীরে করে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়।

৩. ওজন কমাতে সহায়ক:

যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য পেয়ারা (Guava) আদর্শ একটি ফল। এর ক্যালোরি খুব কম, অথচ পেট ভরানোর ক্ষমতা বেশি। অর্থাৎ পেয়ারা (Guava) খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে বারবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। ডায়েট চার্টে প্রতিদিন একটি করে পেয়ারা (Guava) যোগ করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হয়।

৪. হজমশক্তি উন্নত করে:

পেয়ারার (Guava) মধ্যে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত পেয়ারা (Guava) খেলে উপকার পাবেন। শুধু তাই নয়, পেয়ারা (Guava) পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়, যা হজম প্রক্রিয়াকে আরও সুস্থ রাখে।

৫. হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা:

পেয়ারা (Guava) খেলে হৃদ্‌যন্ত্র ভালো থাকে। এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদ্‌রোগ, হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৬. চোখের জন্য উপকারি:

অনেকেই ভাবেন শুধু গাজর খেলে চোখ ভালো থাকে। আসলে পেয়ারাও (Guava) চোখের জন্য সমান উপকারি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ (Vitamin A), যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যারা মোবাইল বা কম্পিউটার বেশি ব্যবহার করেন, তারা নিয়মিত পেয়ারা (Guava) খেলে চোখের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কম অনুভব করবেন।

৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক:

পেয়ারার (Guava) মধ্যে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন লাইসোপিন ও কোয়ারসেটিন রয়েছে। এই উপাদানগুলো শরীরে ক্ষতিকারক জীবাণু কমাতে সাহায্য করে। ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

৮. ত্বক ও চুলের যত্ন করে:

যারা সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বক চান, তাদের জন্য পেয়ারা (Guava) একপ্রকার প্রাকৃতিক ওষুধ। পেয়ারার (Guava) ভিটামিন সি (Vitamin C) ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বককে টানটান ও যৌবনদীপ্ত রাখে। অন্যদিকে, পেয়ারার (Guava) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

৯. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারি:

গর্ভবতী নারীদের জন্য পেয়ারা (Guava) অত্যন্ত উপকারি। এতে থাকা ফোলেট (Folate) শিশুর স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে গঠনে সাহায্য করে। এছাড়াও, পেয়ারার (Guava) ভিটামিন (Vitamin) ও খনিজ গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১০. মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি:

পেয়ারার (Guava) ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin B Complex) মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। এছাড়া পটাশিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে, মানসিক চাপ কমায়। তাই যারা প্রায়শই দুশ্চিন্তা বা ক্লান্তিতে ভোগেন, তাদের জন্য পেয়ারা (Guava) খাওয়া উপকারি।

১১. সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী:

পেয়ারা (Guava) শুধু উপকারি নয়, এটি সবার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। অর্থাৎ দাম কম, প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়, আবার গ্রামাঞ্চলে অনেক বাড়ির আঙিনায়ও এই গাছ জন্মায়। তাই অন্য ফলের তুলনায় পেয়ারা (Guava) সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পেয়ারা (Guava) এমন এক ফল যা আমাদের শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের জন্যই উপকারি। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ডায়াবেটিস ও হৃদ্‌রোগ নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বক-চুলের যত্নে সহায়ক, এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। এছাড়াও সুস্থ থাকতে ও রোগ প্রতিরোধ করতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি করে পেয়ারা (Guava) রাখা উচিৎ। প্রকৃতির দেওয়া এই সস্তা অথচ মহামূল্যবান ফল আমাদের জীবনকে আরও সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version