ঘরোয়া পদ্ধতিতে ট্যান কমানোর উপায়

আমাদের দেশে গরম হলে সূর্য তাপ এবং অস্বস্তিকর ঘাম ব্যাপারটি স্বাভাবিক। এই সময়ে ত্বকে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে একটি হলো ট্যানিং। বিশেষত আমাদের হাত, যা সব সময় সূর্যের আলোতে থাকে, সেখানে ট্যান পড়ার আশঙ্কা বেশি। ট্যান ত্বকের রঙকেও ক্ষতি করে না, অনেক সময় ত্বককে রুক্ষ ও নির্জীবও করে ফেলে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই! ঘরের কিছু প্রকৃতিক উপকরণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা।

ট্যান হল কী এবং এটি কেন সৃষ্টি হয়?

ট্যানিং হলো সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির (UV rays) কারণে ত্বকে মেলানিন নামক রঞ্জক পদার্থের উৎপাদন বেড়ে যাওয়া। মেলানিন আমাদের ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। তবে বেশি মেলানিন ত্বকের গাঢ়তা বৃদ্ধি করে, যা আমরা ট্যান হিসেবে জানি।

আজ আমরা গ্রীষ্মের তাপ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য কয়েকটি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব

১. লেবু ও মধু: লেবুর মধ্যে প্রাকৃতিক ব্লিচিং ক্ষমতা রয়েছে, যা ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সহায়ক। মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বককে নরম রাখে।

ব্যবহার: একটি পাত্রে ২ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি আপনার ট্যান প্রভাবিত হাতে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট জন্য রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানির সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।

. টমেটো ও দই: টমেটোতে বিদ্যমান লাইকোপেন ত্বকের জন্য উপকারে আসে এবং দইয়ে ল্যাকটিক অ্যাসিড পরিপূর্ণ, যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে সহায়তা করে।

ব্যবহার: একটি মাঝারি আকৃতির টমেটো কোটা করে ২ চামচ দই মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি হাতে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে হালকা হাতে ঘষে তুলে ফেলুন এবং জল দিয়ে ধোয়ার করুন। সপ্তাহে ২-৩ বার করলে ভালো ফলাফল হবে।

৩. বেসন এবং হলুদ: বেসন ত্বক পরিষ্কার করতে সক্ষম এবং হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি প্রাচীনে রূপচর্চার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ব্যবহার: ২ চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কাঁচা দুধ বা গোলাপ জল মিশিয়ে একটি ঘন পেষ্ট তৈরি করুন। এই প্যাকটি হাতে লাগিয়ে শুকাতে অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে হালকা হাতে ঘষে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪. শসা ও অ্যালোভেরা: শসা ত্বককে শান্তি দেয় এবং অ্যালোভেরা ত্বকের ফোলা কমাতে ও আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ব্যবহার: একটি শসার রস বের করে ২ চামচ অ্যালোভেরা জেল সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি হাতে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। পরে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রতিদিন ব্যবহার করা নিরাপদ।

৫. আলু: আলুর মধ্যে প্রাকৃতিক ব্লিচিং এনজাইম রয়েছে, যা ত্বকের গাঢ় দাগ কমাতে সহায়তা করে।

ব্যবহার: একটি কাঁচা আলুর টুকরা ত্বকের দাগে সরাসরি ঘষে দিতে পারেন। অথবা আলুর রস বের করে তাতে তুলা ভিজিয়ে ১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এটি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

৬. ওটমিল ও দুধ: ওটমিল একটি দুর্দান্ত এক্সফোলিয়েটর যা মৃত ত্বক অপসারিত করে এবং দুধ ত্বককে পুষ্টি সরবরাহ করে।

ব্যবহার: ২ চামচ ওটমিল গুঁড়ো নিয়ে তার সঙ্গে প্রয়োজনমতো কাঁচা দুধ মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি হাতে লাগিয়ে হালকা হাতে গোলাকৃতিতে ঘষুন এবং ১৫-২০ মিনিট উপযুক্তভাবে রেখে দিন। পরে জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করা যেতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

এসপিএফ ব্যবহার করুন: বাইরে যাওয়ার অন্তত ২০ মিনিট আগে উন্নত এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন হাত এবং শরীরের অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানে লাগান। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর এটি আবার লাগাতে ভুলবেন না।

পোশাক: অতিরিক্ত সময় রোদে থাকলে ফুল-হাতা পোশাক পরার চেষ্টা করুন।

যথেষ্ট পানি গ্রহণ: শরীরকে চাঙা ও ত্বককে সঠিকভাবে হাইড্রেটেড রাখতে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন।

সুষম খাদ্যাভ্যাস: ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফল ও সবজি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করুন।

এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করলে গরমের সময় আপনার হাত ট্যান থেকে অনেকটা মুক্ত থাকবে এবং আপনার ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো নতুন কিছু ব্যবহার করার আগে হাতে একটু পরীক্ষা করে নিন যাতে অ্যালার্জি বা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া না হয়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version