শরীর ও মনের সাম্যতার এক দৃঢ় ভিত্তি-. তড়াসন
তড়াসন: শক্তির উৎস ও মানসিক স্থিরতার পথে প্রথম ধাপ।
তড়াসন, সংস্কৃত শব্দ “তাড়া” অর্থাৎ “পাহাড়” এবং “আসন” অর্থাৎ “ভঙ্গি” থেকে উদ্ভূত। ইংরেজিতে একে বলা হয় Mountain Pose, যার আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায় “পাহাড়ের মতো স্থিরতা”। এটি এমন একটি আসন যা সহজ হলেও অত্যন্ত কার্যকর এবং সমস্ত দাঁড়িয়ে করা যোগভ্যাসের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তড়াসনের মাধ্যমে শরীর ও মনের
ভারসাম্য, শ্বাসপ্রশ্বাসের সচেতনতা এবং মেরুদণ্ডের সঠিক ভঙ্গি গঠন করা যায়।
তড়াসন করার পদ্ধতি:
১) প্রথমে সমতল মাটিতে দাঁড়ান, দুই পা পাশাপাশি রাখুন, গোড়ালি ও পায়ের আঙুল একসঙ্গে থাকবে।
২) দু’হাত শরীরের পাশে শিথিলভাবে রাখুন, তালু থাকবে উন্মুক্ত।
৩) শরীরের ওজন উভয় পায়ে সমানভাবে দিন।
৪) মেরুদণ্ড সোজা রাখুন, পেট ভেতরে টেনে কাঁধ পিছনের দিকে টেনে দিন।
৫) এবার ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং হাত দু’টি মাথার উপর তুলুন, তালু একে অপরের দিকে বা একত্রিত করুন।
৬) চাইলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে হিল তুলে দাঁড়াতে পারেন, এতে ভারসাম্য চর্চা হয়।
৭) চোখ বন্ধ রেখে শ্বাস-প্রশ্বাসে মনোযোগ দিন, পূর্ণ মনঃসংযোগে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত থাকুন।
৮) এরপর ধীরে ধীরে হিল নামিয়ে হাত নামিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ফিরে আসুন।
তড়াসনের উপকারিতা:
১) মেরুদণ্ড ও ভঙ্গিমা সোজা রাখে: তড়াসন মেরুদণ্ডের দৈর্ঘ্য বাড়ায় এবং শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঠিক অবস্থান গঠনে সহায়তা করে।
২) মানসিক স্থিরতা ও ফোকাস বাড়ায়: শ্বাস ও শরীরের প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর ফলে মন শান্ত হয় ও একাগ্রতা তৈরি হয়।
৩) পেশি ও হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে: বিশেষ করে পা, উরু, পেট এবং পিঠের পেশিতে টান পড়ে যা শক্তি গঠনে সাহায্য করে।
৪) শরীরের ভারসাম্য উন্নত করে: পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা বাড়ে।
৫) শ্বাসপ্রশ্বাস সচেতনতা বাড়ায়: ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার মাধ্যমে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
৬) উচ্চতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: বয়ঃসন্ধিকালে নিয়মিত চর্চা করলে উচ্চতা বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা
১) মাথা ঘোরা বা রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চর্চা করা উচিত।
২) ভারসাম্যজনিত অসুবিধা থাকলে পায়ের গোড়ালি না তুলেই করতে পারেন।
৩) গর্ভবতী মহিলারা যোগা প্রশিক্ষক অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অথবা তত্ত্বাবধানে তড়াসন করবেন।
উপসংহার
তড়াসন যোগব্যায়ামের মূলভিত্তি। এটি যেমন সহজ, তেমনি কার্যকর। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট তড়াসন চর্চা করলে শরীর-মন উভয়ের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কর্মব্যস্ত জীবনে যারা শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য এটি এক চমৎকার অভ্যাস। তড়াসন মানসিক স্থিতি, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মচেতনা বৃদ্ধি করে — যা আজকের দ্রুতগতির জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
