পুঁই শাক – ঘরোয়া স্বাদের রাজা ও পুষ্টির আধার
সহজলভ্য, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত – পুই শাকের গুণ জানলে আপনারা অবাক হবেন।
নরম পাতায় স্বাদে-ঘ্রাণে অনন্য, শরীরের যত্নে প্রতিদিনের পছন্দ – পুষ্টিতে ভরপুর পুঁই শাক।
পুঁই শাক কী?
পুঁই শাক (Basella alba) একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় সবুজ শাক, যা ভারত, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঘরোয়া রান্নায় বহুল ব্যবহৃত। একে স্থানীয়ভাবে “পুঁই শাক” বলেও ডাকা হয়। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের একধরনের লতা জাতীয় গাছ, যার পাতা মোটা, নরম ও মসৃণ।
পুঁই শাক সাধারণত দুই ধরনের হয়—সবুজ পাতা ও বেগুনি ডাঁটার। দু’টিতেই থাকে অনেক পুষ্টি উপাদান। এটি হালকা রান্না করা যায় অথবা মাছ, ডাল, শুঁটি, বেগুন, কুমড়ো কিংবা চিংড়ি মাছ দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। শুধু স্বাদে নয়, এটি স্বাস্থ্যরক্ষার দিক থেকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ শাক।
পুষ্টিগুণ:
পুঁইশাক ভরপুর পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ:
১) ভিটামিন A, B2, B6, C ও E
২) ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস।
৩) অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও আঁশ (ফাইবার)।
৪) অতি কম ক্যালোরি, ফ্যাট ফ্রি
এই শাক শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমের সমস্যা দূর করে।
১) দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে:
ভিটামিন A চোখের জন্য উপকারী এবং রাতকানা প্রতিরোধে সহায়ক।
২) হজমে সহায়ক:
আঁশ থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং হজমের গতি বাড়ায়।
৩) রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে:
পুঁই শাকে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
৪) ত্বক ও চুলের জন্য ভালো:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন E ত্বকের উজ্জ্বলতা ও চুলের স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।
৫) হাড় শক্ত করে:
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করে।
৬) গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারি:
এতে থাকা ফলেট গর্ভকালীন শিশুর সুস্থ বিকাশে সাহায্য করে।
রান্নার উপায়:
১) পুইশাকে বেগুন, কুমড়া বা চালকুমড়ার সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়।
২) চিংড়ি বা মাছ দিয়ে ‘পুঁই-চিংড়ি’ বা ‘শোল-মাছ-পুঁই’ও খুব জনপ্রিয় পদ।
৩) ডাল বা শুঁটি দিয়ে হালকা রান্নাতেও স্বাদে অনন্য।
বিশেষ সতর্কতা:
পুইশাক একটি জনপ্রিয় সবজি,তবে এর কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পুইশাক খেলে অ্যালার্জি হতে পারে,যেমন- ত্বকের ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা যেতে পারে, যাদের এই ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের পুই শাক খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচিত।
সতর্কতা:
১) অ্যালার্জি:
পুই শাকে অনেকের অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। যাদের অ্যালার্জির প্রবণতা বেশি তাদের ক্ষেত্রে পুঁইশাক খাবার পর ত্বকে ত্বক ফুসকুড়ি বা চুলকানি হতে পারে।
২) অতিরিক্ত সেবন:
অতিরিক্ত পুঁইশাক খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
৩) কিডনি সমস্যা:
যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের পুঁইশাক খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
পুঁইশাক কেবল একটি সুস্বাদু শাক নয়, এটি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর উপাদান যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ – সবার জন্য উপকারী। সহজলভ্য ও রান্নায় বহুমুখী ব্যবহারের কারণে পুই শাক প্রতিটি বাঙালি ঘরের খাবারের তালিকায় গর্বের সাথে জায়গা করে নিয়েছে।
