ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods)স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি?

অনেকে মনে করেন ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods) মানেই অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি। কিন্তু আসলে সব ক্যালরি একই রকম নয়।

ভালো ক্যালরির উৎস: ভাত, রুটি, ডাল, শাকসবজি, মাছ, ডিম, দুধ, বাদাম, ফল এসব খাবারে থাকা ক্যালরি শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন (Vitamin), খনিজ ও প্রোটিনও (Protein) দেয়। এগুলোকে বলে “হেলদি ক্যালরি” (Healthy Calories)।

খারাপ ক্যালরির উৎস: কোল্ড ড্রিঙ্কস, চিপস, কেক, পেস্ট্রি বা জাঙ্ক ফুডে থাকা ক্যালরি (Calories)শুধু অস্থায়ী শক্তি দেয়, কিন্তু শরীরের জন্য কোনো অতিরিক্ত পুষ্টিগুণ আনে না। এগুলোকে বলা হয় “এম্পটি ক্যালরি”(Empty Calories)।

তাই বোঝা দরকার, ক্যালরি মানেই ক্ষতি নয়। বরং ঠিকভাবে নির্বাচন করলে ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods) আমাদের স্বাস্থ্যকে শক্তিশালী করে তোলে।

শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে ক্যালরির ভূমিকা

আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি বেরিয়ে যায়। যদি আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালরি খাই, তাহলে অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়। ফলে ওজন বাড়ে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।

আবার যদি আমরা প্রয়োজনের চেয়ে কম ক্যালরি খাই, তবে শরীরে দুর্বলতা আসে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, চুল পড়া, ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। তাই ক্যালরি আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি।

ক্যালরিযুক্ত খাবারের উপকারিতা

১. শক্তি জোগায়: সারাদিন কর্মক্ষম থাকতে ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods) অপরিহার্য।

২. মস্তিষ্কের কাজ সচল রাখে: পড়াশোনা বা অফিসের কাজের জন্য মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতে ক্যালরি দরকার।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সঠিক ক্যালরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

৪. শিশুদের বৃদ্ধিতে উন্নতি করে: বেড়ে ওঠা বয়সে ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন দুধ, ডিম, মাছ, ফল অত্যন্ত জরুরী।

৫. শরীরচর্চায় সহায়তা করে: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের পেশী গঠনে ক্যালরিযুক্ত খাবারের বড় ভূমিকা রয়েছে।

কোন খাবার থেকে স্বাস্থ্যকর ক্যালরি পাওয়া যায়?

শর্করা: ভাত, রুটি, ওটস, আলু, মিষ্টি আলু।

প্রোটিন: মাছ, মুরগি, ডিম, ডাল, দুধ।

চর্বি: অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, বাদাম, বীজ।

ফল ও সবজি: আপেল, কলা, আম, কমলা, শাকপাতা, গাজর। এসব খাবার থেকে পাওয়া ক্যালরি শরীরকে শুধু শক্তিই দেয় না, প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও সরবরাহ করে।

ক্যালরি গ্রহণে ভারসাম্যের গুরুত্ব

ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods) কতটা উপকারি হবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে ভারসাম্যের ওপর।

সঠিক সময়ে খাওয়া: সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার ঠিক সময়ে খেলে ক্যালরি সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।

পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ: বেশি ক্যালরি শরীরের ক্ষতি করে, আবার কম ক্যালরি শরীরকে দুর্বল করে।

কাজের ধরন অনুযায়ী ক্যালরি: যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন, যেমন কৃষক বা শ্রমিক, তাদের ক্যালরির চাহিদা বেশি। আবার অফিসের কর্মীরা কম ক্যালরি পেলেও চলতে পারে।

ক্যালরিযুক্ত খাবার (Caloric Foods) আসলে আমাদের জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যেমন-শক্তি, কর্মক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সব কিছুর পেছনে ক্যালরির অবদান রয়েছে। তবে কোন খাবার থেকে ক্যালরি নিচ্ছি এবং কতটা নিচ্ছি, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার থেকে ক্যালরি নিলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। অন্যদিকে জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত ক্যালরি শরীরে নানা রোগ ডেকে আনে। তাই ক্যালরি কখনোই শত্রু নয় বরং সঠিকভাবে গ্রহণ করলে ক্যালরিযুক্ত খাবার আমাদের জীবনের সাথী হয়ে ওঠে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version