সংক্রমণ জনিত রোগ থেকে বাঁচার কি উপায়?

সংক্রমণজনিত রোগ সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবীর কারণে হয়ে থাকে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু সচেতনতা ও অভ্যাস অনুসরণ করা খুব জরুরি।

সংক্রমণ কিভাবে ছড়ায়?

১. হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে (Airborne)

২. সংক্রামিত জিনিস বা শরীর স্পর্শের মাধ্যমে (Contact Transmission)

৩. অপরিষ্কার খাবার ও জলের মাধ্যমে (Food/Waterborne)

৪. মশা, মাছি বা অন্যান্য বাহকের মাধ্যমে (Vector-borne)

তাই সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কিছু কার্যকর ও জরুরি উপায় তুলে ধরছি:

১. হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন: বাইরে থেকে ফিরে, খাবার খাওয়ার আগে ও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান ও জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে।

. স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন: বাইরে থাকার সময় হাতে জীবাণুনাশক স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত।

৩. মাস্ক পরুন: ভিড়ের মধ্যে বা অসুস্থ কারও সংস্পর্শে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।

৪. রেসপিরেটরি হাইজিন বজায় রাখা: কাশি বা হাঁচির সময় মুখ ও নাক ঢাকতে টিস্যু বা কনুই ব্যবহার করুন।ব্যবহৃত টিস্যু ফেলে দিন এবং হাত ধুয়ে ফেলুন।

৫. জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা: দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, জলের ট্যাপ ইত্যাদি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করুন।ঘর পরিষ্কার রাখুন এবং আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।

৬. পুষ্টিকর খাবার খান: ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে।

৭. পর্যাপ্ত জল পান করুন: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি।

৮. ব্যক্তিগত পরিষ্কার: পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন: নিয়মিত গোসল করুন, জামাকাপড় পরিষ্কার রাখুন এবং বিছানা-বালিশ নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

৯. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা: অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।ভিড় এড়িয়ে চলুন এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।

১০. টিকা গ্রহণ করুন: নির্ধারিত প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন যথাসময়ে গ্রহণ করুন।

১১.শিশু ও বয়স্কদের জন্য বিশেষ সতর্কতা: শিশুদের খেলনার পর পরিষ্কার হাত ধুয়ে ফেলানো। বয়স্কদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দিন।শিশুদের মুখে বারবার হাত না দেওয়া ও বাইরে খেলাধুলার পর পরিষ্কার করা।

সংক্রমণজনিত রোগের কিছু সাধারণ ধরন:

১. ভাইরাসজনিত রোগ: যেমন কি সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনা, ডেঙ্গু।

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: যেমন কি টাইফয়েড, কলেরা, টিউবারকুলোসিস (টিবি)।

৩. ছত্রাকজনিত রোগ: যেমন কি দাদ, চুলকানি।

৪. পরজীবীজনিত রোগ: যেমন কি ম্যালেরিয়া, অ্যামিবিয়াসিস।

ঘরোয়া প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

১. তুলসী পাতা, আদা-হলুদ-গোলমরিচ দিয়ে তৈরি চা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

২. লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বাড়ে।

৩. ঘরবাড়ি জীবাণুমুক্ত রাখুন, বিশেষ করে দরজার হাতল, মোবাইল, রিমোট ইত্যাদি।

সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার বা স্বাস্থ্য দপ্তরের ভূমিকা:

১. জনসচেতনতা মূলক ব্য় ক্যাম্পেইন।

২. ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি।

৩. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টেলিমেডিসিন সেবা।

৪. মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে স্প্রে ও ফগিং।

উপসংহার:

সংক্রমণজনিত রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সচেতনতা থাকা আবশ্যক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অনেক মারাত্মক সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

এই অভ্যাসগুলো শুধু করোনা ভাইরাস নয়, অন্যান্য সংক্রমণ যেমন ফ্লু, ঠান্ডা, ডেঙ্গু ইত্যাদি থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version