গর্ভাসন: ধ্যান, ভারসাম্য ও আত্মসংযোগের আধার
“শিশু ভ্রূণের ন্যায় আত্মস্থ হয়ে — গর্ভাসনে মেলে আত্মার সাথে সংযোগের দ্বার”।
আসনের নাম:
গর্ভাসন (Garbhāsana)
সংস্কৃত অর্থ:
“গর্ভ” অর্থ ভ্রূণ বা গর্ভস্থ শিশু,
“আসন” অর্থ বসার ভঙ্গি।
গর্ভাসনে শরীরের ভঙ্গিমা এমন হয় যেন এক শিশু মাতৃগর্ভে রয়েছে — শান্ত, স্থির ও অন্তর্মুখী।
গর্ভাসনের অনুশীলন পদ্ধতি (Step-by-Step Instructions):
পূর্ব প্রস্তুতি:
১) সমতল ও শান্ত জায়গায় বসার উপযুক্ত পরিবেশ।
২) শরীরের কোনো কঠোরতা না থাকলে ভালো হয়।
৩) পদ্মাসনে (পায়ের পাঁজর জোড়া) বসার অভ্যাস থাকা শ্রেয়।
গর্ভাসন করার ধাপ:
১) একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ম্যাট নেবেন।
২) পদ্মাসনে বসুন — দুই পা একে অপরের উরুতে তুলে রাখুন।
৩) দুই হাতের আঙুল গোঁড়ালি বা পায়ের পাতা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে নিন (পাঁজরের মাঝখানে বা পায়ের তালুর ফাঁকে)।
৪) হাত ভেতরে রেখে ধীরে ধীরে শরীর সামনের দিকে কিছুটা ঝুকিয়ে দিন।
৫) পিঠ সোজা রাখুন, চোখ বন্ধ করে রাখুন।
৬) শ্বাসপ্রশ্বাস ধীর ও গভীর রাখুন।
৭) এই অবস্থায় ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট থাকুন, ধীরে ধীরে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
গর্ভাসনের উপকারিতা: (Benefits)
১) মনঃসংযোগ ও ধ্যান উন্নত করে:
অন্তর্মুখী ভঙ্গিমা মনকে স্থির ও সচেতন করে।
২) শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে:
একপদে ভারসাম্য রাখার কারণে মন ও দেহের সামঞ্জস্য বাড়ে।
৩) পিঠ ও কোমরের নমনীয়তা বাড়ায়:
মেরুদণ্ড সোজা রেখে চর্চা করলে পিঠ মজবুত হয়।
৪) স্নায়ু শিথিল করে:
ধ্যানচর্চায় মনকে শিথিল ও প্রশান্ত করে।
৫) রক্তসঞ্চালন উন্নত করে:
পদ্মাসনের অবস্থান রক্তসঞ্চালনে সহায়ক।
৬) শরীরকে হালকা রাখে:
নিঃসাড় অবস্থান শরীরকে ক্লান্তি মুক্ত করে।
বিশেষ সতর্কতা ও যাদের জন্য নয়:
অবস্থান ও বিশেষ সতর্কতা:
১) গর্ভবতী নারীরা না করা উচিত, কারণ পেটে চাপ পড়ে। একজন অভিজ্ঞ যোগ প্রশিক্ষক অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অনুশীলন করবেন।
২) হাঁটু বা কোমরে সমস্যা:
হাঁটুর ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস থাকলে এড়িয়ে চলা ভালো।
৩) মেরুদণ্ডে আঘাত আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
যোগশাস্ত্রে গর্ভাসনের তাৎপর্য:
১) গর্ভাসন ধ্যান ও আত্মসংযোগের অন্যতম পথ।
২) অনেক যোগী ও ধ্যানপ্রেমী এই আসনে বসে দীর্ঘসময় ব্যয় করেন, কারণ এটি শরীরকে এক স্থিরতা প্রদান করে।
৩) এটি “অন্তর্জগতে প্রবেশের প্রতীকী আসন” হিসেবেও বিবেচিত।
সময় ও উপযুক্ত অনুশীলন:
১) সকালে খালি পেটে চর্চা করা উত্তম।
২) ধ্যানচর্চা বা প্রাণায়ামের আগে এই আসন ১–২ মিনিটের জন্য অভ্যাস করতে পারেন।
৩) নিয়মিত অভ্যাসে আসনটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ধরে রাখা সম্ভব হয়।
গর্ভাসনের বিকল্প / সহায়ক আসন উপকারিতা:
১) পদ্মাসন গর্ভাসনের মূল ভিত্তি।
২) বদ্ধপদ্মাসন পা ও হাতের আরও মজবুত সংযোগ তৈরি করে।
৩) শুক্লাসন দীর্ঘ ধ্যানের জন্য প্রস্তুত করে।
উপসংহার:
১) গর্ভাসন শুধু শরীরচর্চার একটি আসন নয়, এটি আত্ম-অনুসন্ধান ও ধ্যানের এক গভীর মাধ্যম।
২) নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে এটি মনোসংযোগ, মানসিক স্থিতি ও দেহের ভারসাম্য গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে পারে।
৩) আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় কিছু মুহূর্তের অন্তর্মুখী নিস্তব্ধতা খুঁজে পেতে গর্ভাসনের তুলনা নেই।
