প্রতিদিনের খাবারে পুষ্টির সোনালী ছোঁয়া – ছোলার ডাল
ছোলার ডাল পুষ্টি ও স্বাদের এক অপূর্ব সমারোহ।ছোলার ডাল (Cicer arietinum), যা বাংলায় বহুল পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশে এক জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর খাদ্য। এটি মূলত ছোলার বিচি থেকে তৈরি হয় এবং স্বাদে মিষ্টি ও মোলায়েম হওয়ার কারণে এটি নানান রকম রান্নায় ব্যবহৃত হয়। ছোলার ডাল শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এটি উচ্চ প্রোটিন ও খনিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, ছোলার ডাল শক্তিবর্ধক ও সহজপাচ্য খাবার হিসেবে পরিচিত।
পুষ্টিগুণ:
ছোলার ডালকে এক কথায় পুষ্টির ভাণ্ডার বলা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলার ডালে গড়ে প্রায় ২১-২২ গ্রাম প্রোটিন, ৬০-৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫-৬ গ্রাম ফ্যাট এবং ১০ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও জিঙ্ক রয়েছে। ছোলার ডালে উপস্থিত খাদ্য আঁশ হজমশক্তি উন্নত করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।
স্বাস্থ্য :
১) হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে:
ছোলার ডালের খাদ্য আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক :
ছোলার ডালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না।
৩) ওজন নিয়ন্ত্রণে উপকারি:
ছোলার ডাল উচ্চ প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং অতিরিক্ত ওজন বাড়তে বাধা দেয়।
৪) রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ:
ছোলার ডালের আয়রন ও ফলেট শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে, যা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
৫) হজম শক্তি বাড়ায়:
উচ্চ খাদ্য আঁশ অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৬) শক্তি জোগায়:
ছোলার ডালে জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকার কারণে এটি ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘক্ষণ সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
রান্নায় ব্যবহার
ছোলার ডাল রান্নায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি দিয়ে ছোলার ডাল ভুনা, ছোলার ডাল ডিমের ঝোল, ছোলার ডাল ও পেঁয়াজের বড়া, ছোলার ডাল চচ্চড়ি, এমনকি খিচুড়ি ইত্যাদি সুস্বাদু পদ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের পান্তা ভাত বা লুচির সাথে ছোলার ডাল একটি ঐতিহ্যবাহী সংমিশ্রণ। রান্নার আগে ছোলার ডাল ভিজিয়ে রাখলে এটি দ্রুত সেদ্ধ হয় এবং স্বাদও বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ সতর্কতা
ছোলার ডাল রান্না করার সময় কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।মূলত ছোলার ডাল হজম হতে একটু সময় নেয়, তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের অল্প পরিমাণ খাওয়া উচিত। বা খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা উচিত।এছাড়াও ডালে থাকা গ্যাস দূর করার জন্য রান্নার সময় সামান্য হিং বা আদা ব্যবহার করা যেতে পারে।
এখানে কিছু সতর্কতা উল্লেখ করা হল
১) হজম:
ছোলার ডাল হজম হতে একটু সময় নেয়, তাই যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
২) ভিজিয়ে রাখা:
রান্নার আগে ছোলার ডাল কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে তার দ্রুত সেদ্ধ হয় এবং হজম করা সহজ হয়।
৩) গ্যাস হওয়া:
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ছোলার ডাল খেলে গ্যাস হতে পারে। গ্যাস হওয়া থেকে বাঁচতে রান্নার সময় সামান্য হিং বা আদা ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪) অতিরিক্ত খাওয়া:
অতিরিক্ত পরিমাণে ছোলার ডাল খেলে পেট ফাঁপা বা বদহজম হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
৫) অন্যান্য সমস্যা:
যাদের ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা আছে,তাদের ছোলার ডাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
ছোলার ডাল শুধুমাত্র সুস্বাদুই নয়, বরং এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির অন্যতম উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ছোলার ডাল অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর সুস্থ, সবল ও সক্রিয় থাকে। হৃদরোগ প্রতিরোধ, রক্তশূন্যতা দূরীকরণ থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত, স্বাস্থ্য রক্ষায় ছোলার ডালের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত ছোলার ডাল খাওয়া একান্ত প্রয়োজন।
