প্রাচীন ভেষজ – অ্যালার্জি থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়কারি- কালকাসুন্দে শাক

পরিচিতি ও প্রজাতি

বৈজ্ঞানিক নাম: Senna occidentalis (সেনা ওসিসেন্টালিস বা Cassia occidentalis)

সাধারণ নাম: কলকাসুন্দা, coffee senna, coffeeweed ইত্যাদি উদ্ভিদ বিবরণ: ৪–৭ ফুট উচ্চতায় গজায়, শক্ত ঠাণ্ডাগোড়ার গাঢ় সবুজ কাণ্ড এবং যৌগিক পাতায় প্রায় ৫–১০ জোড়া পাতা থাকে। ফুল হলুদ সোনালি মঞ্জরী ফাগুন-চৈত্রে ফুটে।

ঐতিহ্য ও ব্যবহার:

এটি চোদ্দো শাকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত—বিশেষ করে ভূত চতুর্দশীর বিদান অনুসারে ১৪ ধরনের শাকের মধ্যে অন্যতম, যেখানে এর রস ব্যবহৃত হয় জ্বর, অ্যালার্জি, ক্ষত ও কোষ্ঠবদ্ধতা নিরাময়ে।

গুণাগুণ ও ঔষধি ব্যবহারের বিস্তারিত:

১) অ্যালার্জি ও জ্বর:

পাতার রস ব্যবহার করলে অ্যালার্জি বা জ্বর থেকে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া যায়।

২) পরামর্শ:

সকালে ও সন্ধ্যায় ফুলের চূর্ণ (প্রতি গ্রাম) গরম জল বা পানিতে গ্রহণ করলে অম্বলজনিত গলা-বুক জ্বালা কমে ।

৩) কোষ্ঠকাঠিন্য:

পাতার রস হজম শক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর। ভাত বা চিনির সাথে মিশিয়ে লজেন্সের মতো তৈরি করে চুষে খাওয়া যায়।

৪) ক্ষত নিরাময়:

ক্ষত বা চামড়ার ফুলে যাওয়া ক্ষেত্রে পাতার রস মুখে মেখে ব্যবহার করলে দ্রুত নিরাময় হয়।

৫) হাঁপানি ও কাশি:

শিকড়ের টিঞ্চার ও পাতা-ফুলের মিশ্রণ দ্বারা হাঁপানি ও হুপিং কাশি নিরাময়ে উপকার হয়।

৬) লজেন্সের মতো রস-বিশিষ্ট মিশ্রণ চুষে খেলে কাশি দ্রুত সেরে যায়।

৭) স্বরভঙ্গ ও অজ্ঞান অবস্থায়:

স্বর ভঙ্গ হলে ফুল ও পাতা ১০ গ্রাম গরম জলে সিদ্ধ করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

৮) অজ্ঞান হলে পাতার রস এক চামচ খাওয়ানো এবং নাকের মধ্যে দু’ ফোঁটা দিলে মুর্ছা ভাঙে।

বিশেষ সতর্কতা ও ব্যবহার সংক্রান্ত পরামর্শ:

১) গাছের শারীরিক তথ্য অনুসারে, এটি তিক্ত স্বাদের, কিছু ক্ষেত্রে পানিয়টিরূপে (হুপিং কফ) ব্যবহার করা হয়। তবে বিষাক্ততা নিয়ে সতর্কতায় যেতে হতে পারে কারণ এর বীজ কফি বিকল্প হলেও গবেষণা নির্দেশ করে Senna occidentalis অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতিকর হতে পারে ।

২) মাথায় রাখতে হবে, যেকোনো ভেষজ উপাদান ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

উপসংহার:

কালকাসুন্দে শাক একটি বহুবিধ ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ, যা বিপাকশক্তি উন্নয়নে, কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি, ক্ষত নিরাময় এবং কোষ্ঠবদ্ধতা নিরাময়ের ক্ষেত্রে প্রচলিতভাবে ব্যবহৃত। তবে এর তিক্ত স্বাদ কমে এবং স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার সঙ্গত হলে ভালো ফল দিতে পারে। যেহেতু এর মধ্যে বিষাক্ত উপাদান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ব্যবহারে সতর্ক থাকা এবং স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকের পরামর্শ সংগ্রহন অত্যাবশ্যক।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version