প্রাণায়াম আসন – শ্বাসনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহ-মন সুস্থ রাখার প্রাচীন যোগ পদ্ধতি

প্রাণায়াম আসন হল যোগশাস্ত্রে বর্ণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্বাসনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মন ও শরীরকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। “প্রাণায়াম” শব্দটি সংস্কৃত ভাষার দুটি শব্দ থেকে এসেছে—“প্রাণ” অর্থ জীবনশক্তি বা শ্বাস এবং “আয়াম” অর্থ নিয়ন্ত্রণ বা সম্প্রসারণ। অর্থাৎ, প্রাণায়াম হল শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের এক সুশৃঙ্খল ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা শরীর, মন ও আত্মার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।

প্রাণায়ামের মূল উদ্দেশ্য:

১) প্রনায়াম শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হওয়া প্রাণশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ ও সুসংহত করা। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে এটি মানসিক চাপ কমাতে, মনোযোগ বাড়াতে এবং শরীরের রক্তসঞ্চালন ও হজমব্যবস্থা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি শুধুমাত্র শারীরিক অনুশীলন নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক সাধনাও বটে।

প্রাণায়ামের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে যেমন:

১) নাড়িশুদ্ধি বা অনুলোম-বিলোম: একনাসা দিয়ে শ্বাস নিয়ে অপর নাসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া – এটি মানসিক শান্তি ও স্নায়ুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।

২) কপালভাতি: দ্রুত ও জোরে শ্বাস বের করা – এটি পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং হজমশক্তি বাড়ায়।

৩) ভ্রামরি: মৌমাছির মতো শব্দ করে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়া – এটি মনকে প্রশান্ত করে এবং ঘুমের সমস্যা কমায়।

৪) উজ্জাই: গলার স্বর ব্যবহার করে ধীরে শ্বাস নেওয়া – এটি শ্বাসযন্ত্রের উন্নতি ঘটায়।

৫) ভাস্ত্রিকা: দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীর উত্তেজিত ও শক্তিশালী করে।

৬) প্রাণায়ামের আসনের জন্য শান্ত, পরিষ্কার ও হাওয়াবদ্ধ পরিবেশ উপযুক্ত। বসার জন্য পদ্মাসন, সিদ্ধাসন বা সহজ আসন ব্যবহার করা যায়।

৭) পিঠ সোজা, চোখ বন্ধ এবং মন শান্ত রেখে শ্বাসের গতি অনুসরণ করাই প্রাণায়ামের মূল কৌশল।

প্রাণায়ামের উপকারিতা:

১) ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা, হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস,ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা, পাচনতন্ত্রের উন্নতি,মানসিক চাপ ও উদ্বেগ হ্রাস,একাগ্রতা বৃদ্ধি, ঘুমের উন্নতি,মানসিক সুস্থতা ও মেজাজ উন্নত করা।

আধ্যাত্মিক উপকারিতা:

১) আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি ,ধ্যান ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করা।

প্রাণায়াম একটি নিরাপদ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। যে কোন নতুন শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল শুরু করার আগে একজন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানেও শ্বাসনিয়ন্ত্রণকে মানসিক স্বাস্থ্য ও হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত প্রাণায়াম অনুশীলন করলে দুশ্চিন্তা, হতাশা, উচ্চ রক্তচাপ ও অনিদ্রা কমে যায়। এটি ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।

বিশেষ সতর্কতা:

১) যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রাণায়াম শুরু করা উচিত।

২) ধৈর্য, নিয়মিততা ও সতর্কতার সঙ্গে অনুশীলন করলে প্রাণায়াম দেহ, মন ও আত্মাকে একত্রে সুস্থ রাখে।

শেষ কথা:

প্রাণায়াম শুধুমাত্র একটি ব্যায়াম নয়, এটি জীবনের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও গভীর সচেতনতার পথ। নিয়মিত চর্চা করলে এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version