পুষ্টির ভাণ্ডার ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য- মসুর ডাল
মসুর ডাল ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল ব্যবহৃত এক ধরণের ডাল যা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্য তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি লেন্স এসকুলেন্টা (Lens esculenta) উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন রঙ ও প্রকারে পাওয়া যায় যেমন লাল মসুর, সবুজ মসুর ও বাদামী মসুর। স্বাদে মোলায়েম ও রান্নায় সহজ হওয়ার কারণে এটি প্রতিদিনের রান্নাঘরের একটি অপরিহার্য উপাদান।
পুষ্টিগুণ:
মসুর ডালকে প্রায়ই ‘গরীবের মাংস’ বলা হয় কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা শরীরের পেশী গঠন ও মেরামতে সহায়ক। প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে প্রায় ২৪-২৫ গ্রাম প্রোটিন, ৫০-৬০ গ্রাম শর্করা, ১-২ গ্রাম ফ্যাট এবং প্রচুর খাদ্য আঁশ রয়েছে। এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, ফলেট, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১) হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক:
মসুর ডালের খাদ্য আঁশ ও পটাশিয়াম রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
২) রক্তশূন্যতা দূর করে:
এতে উপস্থিত আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
৩) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারি:
মসুর ডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে দেয় না।
৪) হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:
উচ্চমাত্রার ফাইবার অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৫) ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
মসুর ডাল কম ক্যালোরিযুক্ত ও উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমায়।
রান্নায় ব্যবহার:
মসুর ডাল রান্নায় সহজ ও বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি দিয়ে ডাল, স্যুপ, খিচুড়ি, স্ট্যু, সালাদ ইত্যাদি তৈরি হয়। লাল মসুর দ্রুত সেদ্ধ হয়, ফলে ব্যস্ত জীবনে এটি আদর্শ একটি খাবার। মসুর ডাল ভেজে গুঁড়ো করে শাকসবজির সাথে মিশিয়ে খাবারের স্বাদও বাড়ানো যায়।
বিশেষ সতর্কতা:
মসুর ডাল একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু অপকারিতা রয়েছে যাদের কিডনির সমস্যা বা গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের জন্য মসুর ডাল ক্ষতিকর হতে পারে এছাড়া কিছু মানুষের অ্যালার্জি বা পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে ওষুধ তাদের কিছু অপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হল।
১) কিডনির সমস্যা:
যাদের কিডনিতে পাথর বা অন্যান্য সমস্যা আছে তাদের জন্য মুসুর ডাল ক্ষতিকর হতে পারে কারণ মসুর ডালে অক্সালেট বেশি থাকে যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
২) গ্যাসের সমস্যা:
মসুর ডাল হজমের সমস্যা করতে পারে এবং গ্যাস ও পেট পাপার কারণ হতে পারে যাদের আইবিএস বা গ্যাসের সমস্যা আছে তাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৩) হজম শক্তি হ্রাস:
মসুর ডালে থাকা ল্যাকটিন নামক উপাদান হজম শক্তি কমিয়ে দিতে পারে,বিশেষ করে যাদের আইবিএস বা হজমের সমস্যা আছে।
৪) অ্যালার্জি:
কিছু মানুষের মসুর ডালের প্রতি অ্যালার্জি হতে পারে, যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলকানি দেখা যেতে পারে।
৫) অন্যান্য:
অতিরিক্ত মসুর ডাল খেলে বমি বমি ভাব দুর্বলতা বা শরীরে ক্যাম্পিং হতে পারে।
যদি আপনাদের উপরের সমস্যাগুলির মধ্যে কোনোটি থেকে থাকে,তাহলে মসুর ডাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
উপসংহার:
মসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এটি পুষ্টির এক অসাধারণ উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন সহজেই পূরণ হয়। হৃদরোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি নেই। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য মসুর ডালকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
