ইনসোমনিয়া (Insomnia)  কি প্রতিকার করা যায়?

আজকাল অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া অনেকের জীবনে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। রাতে ঘুম না আসা বা ঘুম ভেঙে যাওয়া শুধু শরীর নয়, মনেরও ক্ষতি করে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অনিদ্রা মূলত দুই ধরনের হয়। প্রথমটি হল স্বল্পমেয়াদি অনিদ্রা, যা কয়েকদিন বা কয়েক সপ্তাহ থাকে। সাধারণত মানসিক চাপ, পরীক্ষা, চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা বা হঠাৎ পরিবর্তনের কারণে এটি হয়। দ্বিতীয়টি হল দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রা, যা টানা কয়েক মাস ধরে চলে। এটি সাধারণত থাইরয়েড, হরমোনের সমস্যা বা খারাপ অভ্যাসের কারণে হতে পারে।

ভালো খবর হল, অনিদ্রার প্রতিকার সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার পরিবর্তন করলেই ঘুমের সমস্যা অনেকটা কমে যায়। যেমন— প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে শোয়া ও ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। শান্ত, অন্ধকার ও ঠান্ডা পরিবেশে ঘুমালে ঘুম সহজে আসে। রাতে চা, কফি বা সিগারেট এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।

অনেকেই ঘুমানোর আগে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন। চিকিৎসকদের মতে, এটি ঘুমের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে। তাই ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা ভালো। এর বদলে হালকা বই পড়া, শান্ত গান শোনা বা গরম দুধ খাওয়া ঘুম আনতে সাহায্য করতে পারে। দিনের বেলায় লম্বা ঘুম না দেওয়াই ভালো।

যদি এতেও কাজ না হয়, ডাক্তাররা কখনো কখনো অল্প সময়ের জন্য ঘুমের ওষুধ দেন। তবে এগুলো দীর্ঘদিন খাওয়া নিরাপদ নয়। এ ছাড়া বর্তমানে সিবিটি-আই (Cognitive Behavioral Therapy for Insomnia) নামের একটি বিশেষ থেরাপি বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করতে এবং ঘুম নিয়ে অযথা চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যদি সপ্তাহে তিন দিনের বেশি টানা তিন মাস ঘুমের সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক সময় মূল রোগের চিকিৎসা করলেই ঘুম স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, অনিদ্রা কোনো স্থায়ী সমস্যা নয়। নিয়মিত অভ্যাস, মানসিক স্বস্তি আর প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তায় এটি সম্পূর্ণ প্রতিকার করা সম্ভব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version