রোজকার খাবারে পুষ্টির ছোঁয়া- অড়হড় ডাল

অড়হড় ডাল, যা তুর ডাল (Cajanus cajan) বা আরহার ডাল নামেও পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি খাদ্যশস্য। এটি ডাল জাতীয় খাদ্য হিসেবে শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিতেও ভরপুর। গ্রামীণ ভারতীয় রান্নায় এটি একটি অপরিহার্য উপাদান এবং দক্ষিণ ভারতীয় ‘সাম্বার’ বা বাংলার গ্রামীণ রান্নায় এটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। সহজপাচ্য ও হালকা খাবার হিসেবে অড়হড় ডাল আয়ুর্বেদেও উল্লেখযোগ্য।

পুষ্টিগুণ:

অড়হড় ডাল প্রোটিন ও খনিজে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো অড়হড় ডালে গড়ে ২২-২৫ গ্রাম প্রোটিন, ৬০-৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৫-২ গ্রাম ফ্যাট এবং প্রায় ৫-৬ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকে। এছাড়াও এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফলেটের ভালো উৎস। এর উচ্চ প্রোটিন কন্টেন্ট শরীরের টিস্যু গঠন ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা:

১) হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় সহায়ক:

অড়হড় ডালের খাদ্য আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

২) রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ:

এতে উপস্থিত আয়রন ও ফলেট রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে, ফলে অ্যানিমিয়া দূর হয়।

৩) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর:

অড়হড় ডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলক কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না।

৪) হজম শক্তি বৃদ্ধি করে:

উচ্চমাত্রার ফাইবার অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বজায় রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।

৬) শক্তি যোগায়:

অড়হড় ডাল জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, যা ধীরে ধীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।

রান্নায় ব্যবহার

অড়হড় ডাল রান্নায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুমুখী। দক্ষিণ ভারতীয় সাম্বার, বাংলার অড়হড় ডাল ডিমের ঝোল, সবজি মিশিয়ে ডালনা, ডাল ফ্রাই ইত্যাদিতে এটি ব্যবহৃত হয়। ডালটি রান্নার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে দ্রুত সেদ্ধ হয় এবং স্বাদও বাড়ে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, অড়হড় ডাল সিদ্ধ করে সামান্য ঘি দিয়ে খেলে এটি শরীরের জন্য পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য হয়।

বিশেষ সতর্কতা

অড়হড় ডাল (তুর ডাল ) একটি পুষ্টিকর খাবার,তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত! যাদের ইউরিক এসিডের সমস্যা আছে,তাদের এই ডাল কম খাওয়া উচিত, কারণ এতে প্রোটিন বেশি থাকে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে,তাদেরও এটা খাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে! এছাড়া,যাদের ডাল থেকে এলার্জি হয় তাদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।

অতিরিক্ত পরিমাণে অড়হড় ডাল খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে, যেমন-

১) গ্যাস এবং অ্যাসিডিটি:

অড়হড় ডাল হজম হতে সময় নেয়, তাই রাতে এটি খেলে গ্যাস এবং এসিডিটি সমস্যা হতে পারে।

২) রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি:

যদিও অড়হড় ডাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করা মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

৩) কিডনির সমস্যা:

যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ডালে উপস্থিত অক্সালেট নামক উপাদান কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৪) অ্যালার্জি:

কারো কারো ডাল থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। অতএব অড়হড় ডাল খাবার আগেই নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। যদি কোন সমস্যা দেখা যায়,তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

উপসংহার

অড়হড় ডাল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রক্তশূন্যতা দূরীকরণ থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পর্যন্ত বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। তাই নিয়মিত অড়হড় ডাল খাওয়া সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version