পুষ্টিগুণে ভরপুর সোনালী ডাল- মুগ ডাল
Golden lentils, or Vigna radiata, are packed with nutrients.
স্বাস্থ্য ও পুষ্টির সোনালী রহস্য – মুগ ডাল রাখুক শরীর সুস্থ ও সবল।
মুগ ডাল ভারতীয় উপমহাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি ডাল যা প্রাচীনকাল থেকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয়। বৈজ্ঞানিক নাম Vigna radiata। এটি সহজপাচ্য, হালকা এবং স্বাদে অতুলনীয়। রান্না করা হোক বা অঙ্কুরিত অবস্থায় খাওয়া হোক – মুগ ডাল শরীরের জন্য এক অসাধারণ পুষ্টির উৎস। ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই মুগ ডাল রান্নার বিভিন্ন ধরণ প্রচলিত আছে এবং আয়ুর্বেদে এটিকে শরীর ঠান্ডা রাখার উপযোগী খাদ্য বলা হয়।
পুষ্টিগুণ:
মুগ ডালকে পুষ্টির ভাণ্ডার বলা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মুগ ডালে প্রায় ২৪ গ্রাম প্রোটিন, ৬২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং মাত্র ১ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এছাড়াও এতে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ফলেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে। অঙ্কুরিত মুগ ডালে ভিটামিন সি ও এনজাইমের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১) হজমের জন্য উপকারি:
মুগ ডাল সহজপাচ্য এবং উচ্চমাত্রার খাদ্য আঁশ থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
২) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
মুগ ডাল কম ক্যালোরিযুক্ত ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয়।
৩) হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক:
মুগ ডালের পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
৪) ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো:
মুগ ডালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরকে সংক্রমণ ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।
৬) ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি:
মুগ ডালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চুলকে মজবুত করে।
রান্নায় ব্যবহার:
মুগ ডাল দিয়ে ভাজা ডাল, স্যুপ, খিচুড়ি, ডালনার মতো নানান রকমের পদ তৈরি হয়। অঙ্কুরিত মুগ ডাল সালাদে বা স্যান্ডউইচে ব্যবহার করলে এটি আরও স্বাস্থ্যকর হয়। আয়ুর্বেদে মুগ ডাল সিদ্ধ করে সামান্য ঘি ও লবণ মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যা শরীর ঠান্ডা রাখে ও শক্তি জোগায়।
বিশেষ সতর্কতা:
মুগ ডাল সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।যাদের পেটে গ্যাস বা হজমের সমস্যা আছে তাদের মুগ ডাল খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ।এছাড়াও কিডনির সমস্যা থাকলে মুগডাল খাওয়া এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।
মুগ ডালের সম্ভাব্য সতর্কতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলি হল-
১) পেট ফাঁপা ও গ্যাস:
মুগ ডালে কিছু জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে যা অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
২) হজমের সমস্যা:
যাদের হজমের সমস্যা আছে তাদের মুগ ডাল হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
৩) কিডনির সমস্যা:
যাদের কিডনিতে পাথর বা অন্যান্য সমস্যা আছে, তাদের মুগ ডাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪) অঙ্কুরিত মুগ ডালের সতর্কতা:
অঙ্কুরিত মুগ ডাল সঠিকভাবে না ভেজালে বা রান্না না করলে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা,শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের অঙ্করিত মুগ ডাল খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
৫) অতিরিক্ত মুগ ডাল:
অতিরিক্ত মুগ ডাল খেলে হজমের সমস্যা ডিহাইড্রেশন মাথাব্যথা এবং ডায়রিয়ার মধ্যে সমস্যা হতে পারে।
৬) কিছু ক্ষেত্রেই মুগ ডাল শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে,তবে যাদের উপরোক্ত সমস্যাগুলি আছে, তাদের মুগ ডাল খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
মুগ ডাল শুধু সুস্বাদুই নয়, এটি শরীরের জন্য এক অসাধারণ পুষ্টির উৎস। হৃদরোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ওজন নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি – সব ক্ষেত্রেই মুগ ডালের জুড়ি নেই। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মুগ ডাল অন্তর্ভুক্ত করলে সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করা সম্ভব।
