পুষ্টিতে সমৃদ্ধ ভেষজ গুণসম্পন্ন শাক- ওল শাক

ওল শাক (Elephant Foot Yam Leaves বা Amorphophallus paeoniifolius) বাংলার এক জনপ্রিয় ও পুষ্টিগুণে ভরপুর শাক। এটি ওল গাছের কচি পাতা ও ডগা দিয়ে রান্না করা হয়। গ্রামীণ বাংলায় ওল শাকের ভাজা বা তরকারি অনেকেরই প্রিয়। স্বাদে ভিন্নধর্মী হলেও এর অজস্র পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে এটিকে বিশেষ করে তুলেছে।

পুষ্টিগুণ:

ওল শাকে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১) ভিটামিন এ: আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।

২)ভিটামিন সি: আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৩) ক্যালসিয়াম: আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে।

৪) আয়রন: রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৫) ফাইবার: আমাদের হজমশক্তি বাড়ায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৬) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: আমাদের শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা:

১) রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে উপকারি:

ওল শাকে প্রচুর আয়রন থাকায় এটি আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।

২) হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ওল শাক আমাদের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে এবং বয়স্কদের হাড়ক্ষয় রোধে উপকারি।

৩) হজমশক্তি বৃদ্ধি ও পেটের সমস্যার সমাধান:

ওল শাকে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, গ্যাস ও পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।

৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:

আয়ুর্বেদ মতে, ওল শাকের উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারি হতে পারে।

৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ওল শাক নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়।

৬) ওজন কমাতে সহায়ক:

ওল শাকে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকায় এটি ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।

৭) ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ব্রণ ও ত্বকের প্রদাহ প্রতিরোধে সহায়ক।

রান্না পদ্ধতি:

ওল শাক সাধারণত সরষের তেলে শুকনো মরিচ ও রসুন দিয়ে ভাজা করে খাওয়া হয়। অনেক সময় ডাল বা চিংড়ির সঙ্গে মিশিয়েও রান্না করা হয়। রান্নার আগে শাক ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয় এবং কচি পাতা রান্নার জন্য বেশি উপযোগী।

বিশেষ সতর্কতা:

১) ওল শাক অতিরিক্ত খেলে পেট খারাপ বা অ্যালার্জি হতে পারে।

২) গর্ভবতী নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।

উপসংহার:

নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে ওল শাক খেলে শরীর পুষ্টিতে সমৃদ্ধ হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version